অষ্টম শ্রেণির বাংলা: "সুখী মানুষ" ও "অতিথির স্মৃতি" থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর - Path Bari – পাঠ থেকে বাড়ি পর্যন্ত শিক্ষার আলো
শিক্ষা, অনুপ্রেরণা এবং ক্যারিয়ার গাইডলাইনের এক বিশ্বস্ত ঠিকানায় আপনার পদচারণাকে আমরা জানাই আন্তরিক অভিনন্দন Path Bari

অষ্টম শ্রেণির বাংলা: "সুখী মানুষ" ও "অতিথির স্মৃতি" থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

এখানে অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ — "সুখী মানুষ" নাটিকা এবং "অতিথির স্মৃতি" গল্প থেকে কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া হলো। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।

১. "সুখী মানুষ" নাটিকা থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

"সুখী মানুষ" নাটিকাটি মূলত সম্পদ ও সুখের সম্পর্ক নিয়ে লেখা। এটি মানুষের লোভ, অহংকার এবং আত্মিক শান্তির অন্বেষণকে তুলে ধরে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১

উদ্দীপক:

করিম সাহেব গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার অনেক সহায়-সম্পদ, কিন্তু মনে শান্তি নেই। প্রায়ই তিনি নানা অসুখে ভোগেন। ডাক্তার দেখিয়েও কোনো ফল হয় না। ডাক্তার শেষমেশ তাকে একজন সুখী মানুষের জামা পরতে বললেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক দরিদ্র কৃষককে পাওয়া গেল, যে সামান্য যা আছে তাতেই সুখে আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, তার কোনো জামা নেই।

ক. "সুখী মানুষ" নাটিকার মূল বক্তব্য কী?

উত্তর: "সুখী মানুষ" নাটিকার মূল বক্তব্য হলো - সম্পদ মানুষের জীবনে শান্তি বা সুখ এনে দিতে পারে না। প্রকৃত সুখ পার্থিব ভোগ-বিলাসে নয়, বরং অপরের কল্যাণ সাধন, লোভহীনতা এবং মনের প্রশান্তির মধ্যেই নিহিত।

খ. মোড়ল কেন সুখী মানুষের জামা পরতে চেয়েছিল? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মোড়ল ছিল একজন সম্পদশালী কিন্তু দারুণ অসুস্থ মানুষ। কবিরাজ তাকে বলেছিলেন, যদি কোনো সুখী মানুষের জামা তার গায়ে পরানো যায়, তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মোড়ল মনে করত, তার এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সে সুখী নয়, কারণ তার মনে শান্তি ছিল না এবং সে প্রতিনিয়ত অসুস্থতায় ভুগছিল। তাই সে ভাবছিল, সুখী মানুষের জামা পরলে হয়তো সেও সুখী হতে পারবে এবং তার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দূর হবে।

গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের সঙ্গে "সুখী মানুষ" নাটিকার মোড়লের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকের করিম সাহেবের সঙ্গে "সুখী মানুষ" নাটিকার মোড়লের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মানসিক অশান্তি ও অসুস্থতায় ভোগা। মোড়লের মতো করিম সাহেবও গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, কিন্তু তার মনে শান্তি নেই এবং তিনি প্রায়শই অসুস্থ থাকেন। দুজনই মনে করেন, বাইরের কোনো বস্তুগত জিনিসের মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ফিরে আসবে। মোড়ল যেমন সুখী মানুষের জামা খুঁজেছিল, তেমনি করিম সাহেবও একজন সুখী মানুষের জামা পরার পরামর্শ পেয়েছেন। এটি তাদের এই বিশ্বাসকে তুলে ধরে যে, তাদের ব্যক্তিগত অশান্তি বা অসুস্থতা বাহ্যিক উপায়ে দূর করা সম্ভব, যদিও প্রকৃত কারণ তাদের মানসিক অসন্তুষ্টি ও লোভ।

ঘ. "সম্পদই সুখের মূল নয়, আত্মিক শান্তিই প্রকৃত সুখের উৎস" - উদ্দীপক ও "সুখী মানুষ" নাটিকার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: "সম্পদই সুখের মূল নয়, আত্মিক শান্তিই প্রকৃত সুখের উৎস" - মন্তব্যটি উদ্দীপক ও "সুখী মানুষ" নাটিকার আলোকে অত্যন্ত যথার্থ। নাটিকার মোড়ল এবং উদ্দীপকের করিম সাহেব দুজনেই বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও সুখে নেই, কারণ তাদের আত্মিক শান্তি নেই। মোড়ল মানুষের উপর অত্যাচার করে, মানুষের ধন কেড়ে নিয়ে ধনী হয়েছে, ফলে তার মনে কোনো শান্তি ছিল না। অন্যদিকে, কৃষকটির কোনো সম্পদ না থাকলেও সে নিজের শ্রমে উপার্জিত আয়ে সন্তুষ্ট এবং কোনো চোরের ভয় বা দুশ্চিন্তা না থাকায় সে সুখে ঘুমাতে পারে। তার এই মানসিক শান্তিই তাকে প্রকৃত সুখী করেছে। উদ্দীপকের করিম সাহেবও সম্পদের মালিক হয়েও অসুস্থ ও অশান্তিতে ভোগেন, যা প্রমাণ করে যে, কেবল সম্পদ সুখের কারণ নয়। প্রকৃত সুখ আসে মানুষের অন্তরের শান্তি, লোভহীনতা, সরল জীবনযাপন এবং সততার মাধ্যমে। নাটিকা ও উদ্দীপক উভয়ই এই সত্যটি তুলে ধরে যে, মানুষের অভ্যন্তরীণ মানসিক অবস্থা এবং নৈতিকতাই তার সুখের মূল ভিত্তি, বাহ্যিক প্রাচুর্য নয়। তাই বলা যায়, আত্মিক শান্তিই প্রকৃত সুখের উৎস, সম্পদ নয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২

উদ্দীপক:

রতন সাহেব একজন সৎ ব্যবসায়ী। তিনি মনে করেন, অন্যায় পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবনে শান্তি পাওয়া যায় না। তিনি সবসময় সাধ্যমতো মানুষের উপকার করেন। তার অল্প উপার্জন হলেও তিনি হাসিমুখে জীবনযাপন করেন এবং রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমান। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে।

ক. হাসু মোড়লকে কী বলে ডাকত?

উত্তর: হাসু মোড়লকে 'হায়রে মোড়ল' বলে ডাকত।

খ. "মরণ এলে ওষুধে কি কাজ হয়?" - ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উক্তিটি মোড়লের অসুস্থতা এবং তার জীবনের করুণ দশাকে নির্দেশ করে। এখানে বোঝানো হয়েছে যে, যখন মানুষের মৃত্যু আসন্ন হয়, তখন কোনো ওষুধই আর কাজ করে না। এই উক্তিটি মোড়লের জীবনের গভীর অসুখকে বোঝায়, যা কেবল শারীরিক নয়, বরং তার আত্মিক অসুস্থতাকেও নির্দেশ করে। তার জীবনের পাপ ও কৃতকর্মের ফলস্বরূপ যে মানসিক যন্ত্রণা, তা কোনো জাগতিক ওষুধ দিয়ে সারানো সম্ভব নয়। এটি জীবনের গভীর সত্যকে তুলে ধরে যে, প্রাকৃতিক নিয়মকে কেউ আটকাতে পারে না, এবং নৈতিক অধঃপতন থাকলে মনের শান্তিও অধরা থাকে।

গ. উদ্দীপকের রতন সাহেবের সাথে "সুখী মানুষ" নাটিকার কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকের রতন সাহেবের সাথে "সুখী মানুষ" নাটিকার দরিদ্র কৃষকের সাদৃশ্য রয়েছে। নাটিকার কৃষকটির কোনো সম্পদ না থাকলেও সে নিজের শ্রমে উপার্জিত অর্থে সন্তুষ্ট এবং রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে। একইভাবে, রতন সাহেবও সৎ উপার্জনে বিশ্বাসী এবং তার অল্প উপার্জন হলেও তিনি হাসিমুখে জীবনযাপন করেন ও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমান। উভয় চরিত্রই প্রমাণ করে যে, ধন-সম্পদ নয়, বরং সততা, অল্পে তুষ্টি এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও উপকার করার মানসিকতাই প্রকৃত সুখের উৎস। তারা সমাজের প্রচলিত ধারার ব্যতিক্রম, যেখানে সুখকে সম্পদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

ঘ. "সত্যিকারের সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ অধিকাংশ মানুষই আত্মিক শান্তির চেয়ে পার্থিব বস্তুকে প্রাধান্য দেয়" - উদ্দীপক ও "সুখী মানুষ" নাটিকার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: "সত্যিকারের সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ অধিকাংশ মানুষই আত্মিক শান্তির চেয়ে পার্থিব বস্তুকে প্রাধান্য দেয়" - মন্তব্যটি উদ্দীপক ও "সুখী মানুষ" নাটিকার আলোকে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। "সুখী মানুষ" নাটিকায় দেখা যায়, মোড়লের রোগের প্রতিকারের জন্য একজন সুখী মানুষের জামা খুঁজতে গিয়ে পাঁচ গ্রামের কোথাও সুখী মানুষ পাওয়া যায়নি। এর কারণ হলো, বেশিরভাগ মানুষই লোভ, আকাঙ্ক্ষা ও সম্পদের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদের আত্মিক শান্তি হারিয়ে ফেলে। তারা বাহ্যিক ভোগ-বিলাসকে সুখ বলে মনে করে, কিন্তু তা তাদের প্রকৃত আনন্দ দিতে পারে না। উদ্দীপকের রতন সাহেব এবং নাটিকার দরিদ্র কৃষক এই প্রচলিত ধারণার ব্যতিক্রম। তারা সম্পদকে প্রাধান্য না দিয়ে সততা, নৈতিকতা ও অল্পে তুষ্টিকে জীবনে ধারণ করেছেন, যার ফলস্বরূপ তারা আত্মিক শান্তি লাভ করেছেন। কিন্তু তাদের মতো মানুষ সমাজে বিরল। সমাজের অধিকাংশ মানুষই মোড়ল বা করিম সাহেবের মতো সম্পদের লোভে আত্মিক শান্তি বিসর্জন দেয়। এই কারণেই সত্যিকারের সুখী মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ মানুষ পার্থিব বস্তুর মোহে আত্মিক শান্তির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না।


২. "অতিথির স্মৃতি" গল্প থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

"অতিথির স্মৃতি" শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি সংবেদনশীল গল্প। এখানে অসুস্থ লেখকের এক প্রাণীর প্রতি গভীর মমতা এবং সেই মমতার টানাপোড়েন অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহীভাবে বর্ণিত হয়েছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১

উদ্দীপক:

করিম সাহেব প্রতিদিন সকালে হাঁটার জন্য পার্কে যান। পার্কে একটি ল্যাংড়া কুকুরকে প্রায়ই দেখতে পান। কুকুরটি তার পেছনে পেছনে আসে এবং তিনি তাকে কিছু খেতে দেন। কুকুরটি করীম সাহেবকে দেখলে লেজ নাড়ে এবং তার প্রতি এক ধরনের মায়া তৈরি হয়। একদিন করীম সাহেব অসুস্থ হয়ে পার্কে যেতে পারলেন না। কয়েকদিন পর যখন তিনি পার্কে গেলেন, তখন কুকুরটিকে দেখতে পেলেন না। এতে তিনি খুব মন খারাপ করলেন।

ক. লেখক কোথায় বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়েছিলেন?

উত্তর: লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন।

খ. "সেদিন সকালেই আমার যাওয়ার কথা" - উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উক্তিটি লেখকের দেওঘর থেকে ফিরে আসার পূর্বনির্ধারিত দিনের ইঙ্গিত দেয়। লেখক দেওঘরে এসে অসুস্থতার কারণে নিয়মিত ভোরবেলায় হাঁটার সুযোগ পাননি। তবে সুস্থ হয়ে উঠে তিনি আবার নিয়মিত হাঁটতে শুরু করেন এবং পথে এক কুকুরকে তার সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটির প্রতি তার গভীর মায়া জন্মেছিল। এই উক্তিটি মূলত সেই দিনের কথা বলে, যেদিন লেখকের দেওঘর থেকে ফিরে আসার কথা ছিল, এবং যে কারণে তাকে তার প্রিয় অতিথির (কুকুরটির) থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল, যা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল।

গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের সঙ্গে "অতিথির স্মৃতি" গল্পের লেখকের কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকের করিম সাহেবের সঙ্গে "অতিথির স্মৃতি" গল্পের লেখকের প্রাণীর প্রতি গভীর মমতা ও ভালোবাসার দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ। লেখক যেমন দেওঘরে এসে একটি কুকুরের প্রতি মমত্ববোধ অনুভব করেছিলেন এবং তার নিয়মিত সঙ্গী হিসেবে তাকে আপ্যায়ন করতেন, তেমনি করিম সাহেবও পার্কে একটি ল্যাংড়া কুকুরের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাকে খাবার দিয়ে যত্ন নেন। লেখক অসুস্থ হয়ে হাঁটতে না পারায় কুকুরটির অনুপস্থিতি অনুভব করেছিলেন এবং সুস্থ হয়ে এসে তাকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ করেছিলেন। একইভাবে, করিম সাহেবও কুকুরটিকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ করেন। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, যেখানে প্রাণীর অনুপস্থিতি মানুষকে পীড়া দেয়।

ঘ. "পশু-পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা এক শাশ্বত অনুভূতি" - উদ্দীপক ও "অতিথির স্মৃতি" গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: "পশু-পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা এক শাশ্বত অনুভূতি" - মন্তব্যটি উদ্দীপক ও "অতিথির স্মৃতি" গল্পের আলোকে অত্যন্ত সত্য ও গভীর। "অতিথির স্মৃতি" গল্পে লেখক একজন অসুস্থ মানুষ হয়েও একটি ল্যাংড়া কুকুরের প্রতি যে নিবিড় মমত্ববোধ ও মানবিক টান অনুভব করেছেন, তা অসাধারণ। কুকুরটির প্রতি লেখকের গভীর অনুরাগ, তার যত্ন নেওয়া, তার জন্য খাবার পাঠানো এবং অবশেষে তার বিচ্ছেদ বেদনার মাধ্যমে লেখক প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের হৃদয়ে প্রাণীর জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। কুকুরটিকে তিনি 'অতিথি' হিসেবে আপন করে নিয়েছিলেন। উদ্দীপকের করিম সাহেবের ক্ষেত্রেও একই সত্য প্রতিভাত হয়। একটি ল্যাংড়া কুকুরের প্রতি তার যত্ন, ভালোবাসা এবং তার অনুপস্থিতিতে মন খারাপ করা এই শাশ্বত অনুভূতিরই প্রকাশ। মানুষের জীবনে পশু-পাখি কেবল সঙ্গীই নয়, তারা মানুষের একাকীত্ব দূর করে, তাদের মনে শান্তি এনে দেয় এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে এক নির্মল আনন্দ দান করে। এই সম্পর্ক কোনো স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক ও অকৃত্রিম বন্ধন যা মানুষের ভেতরের সংবেদনশীলতাকে জাগিয়ে তোলে। তাই বলা যায়, পশু-পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা আবহমান কাল ধরে চলে আসা এক চিরায়ত অনুভূতি।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২

উদ্দীপক:

সুমনের বাড়িতে একটি পোষা বিড়াল আছে। সুমন বিড়ালটিকে খুব ভালোবাসে এবং প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ ও খাবার দেয়। বিড়ালটিও সুমনের প্রতি অত্যন্ত অনুগত। একদিন সুমনকে জরুরি কাজে শহরের বাইরে যেতে হলো। সে বিড়ালটিকে তার প্রতিবেশীর কাছে রেখে গেল। কয়েকদিন পর সুমন ফিরে এসে দেখল, বিড়ালটি ঠিকমতো খেতে না পেয়ে রোগা হয়ে গেছে। সুমন বিড়ালটিকে বুকে টেনে নিয়ে কেঁদে ফেলল।

ক. লেখকের আতিথ্যের প্রথম দাবিদার কে ছিল?

উত্তর: লেখকের আতিথ্যের প্রথম দাবিদার ছিল একটি কুকুর, যাকে তিনি 'অতিথি' নাম দিয়েছিলেন।

খ. "কিন্তু বেচারী যে সেদিন আমার অতিথি ছিল!" - উক্তিটি দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: উক্তিটির মাধ্যমে লেখক অতিথির প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতাকে প্রকাশ করেছেন। 'বেচারী' শব্দটি দিয়ে তিনি কুকুরটির অসহায়ত্ব এবং তার প্রতি লেখকের গভীর অনুকম্পাকে নির্দেশ করেছেন। কুকুরটি যেহেতু লেখকের কাছে অতিথি হিসেবে এসেছিল এবং তার সেবা ও যত্ন পেয়ে অভ্যস্ত হয়েছিল, তাই তার অনুপস্থিতিতে লেখক দুঃখ পেয়েছিলেন। উক্তিটি দ্বারা লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, কোনো প্রাণী যখন মানুষের সান্নিধ্যে আসে এবং তার ভালোবাসার ভাগীদার হয়, তখন সেই প্রাণীর প্রতি মানুষের এক ধরনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। এটি কেবল খাদ্য দিয়ে আপ্যায়ন নয়, বরং তার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং তার মঙ্গল কামনা করাও এই আতিথ্যের অংশ।

গ. উদ্দীপকের সুমনের আবেগ "অতিথির স্মৃতি" গল্পের লেখকের অনুভূতির কোন দিকটি প্রকাশ করে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকের সুমনের আবেগ "অতিথির স্মৃতি" গল্পের লেখকের প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি এবং তাদের কষ্টে ব্যথিত হওয়ার অনুভূতির দিকটি প্রকাশ করে। লেখক যেমন তার প্রিয় অতিথি (কুকুর) অসুস্থ বা অনুপস্থিত থাকলে বিচলিত হতেন এবং তার জন্য খাদ্য ও যত্নের ব্যবস্থা করতেন, তেমনি সুমনও তার বিড়ালটিকে ঠিকমতো খেতে না পেয়ে রোগা হয়ে যেতে দেখে কষ্ট পেয়েছে এবং কেঁদে ফেলেছে। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষ ও পোষা প্রাণীর মধ্যে একটি গভীর আবেগপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, যেখানে প্রাণীর কষ্ট মানুষের মনেও তীব্র বেদনা জাগায়। এটি কেবল দায়িত্ব পালন নয়, বরং হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত ভালোবাসা ও মায়ার বহিঃপ্রকাশ।

ঘ. "প্রাণীর প্রতি সংবেদনশীলতা মানুষের মানবিকতার পরিচায়ক" - উদ্দীপক ও "অতিথির স্মৃতি" গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: "প্রাণীর প্রতি সংবেদনশীলতা মানুষের মানবিকতার পরিচায়ক" - উদ্দীপক ও "অতিথির স্মৃতি" গল্পের আলোকে মন্তব্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। "অতিথির স্মৃতি" গল্পে লেখক অসুস্থ অবস্থায় দেওঘরে গিয়ে এক ল্যাংড়া কুকুরের প্রতি যে গভীর মমতা দেখিয়েছেন, তা তার উদার ও সংবেদনশীল মানবিকতার পরিচয় বহন করে। তিনি কুকুরটির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন, তার সঙ্গে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েছেন এবং তার অসুস্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কুকুরটিকে যখন মালিনী তার তাড়িয়ে দিয়েছে, তখন লেখক ব্যথিত হয়েছেন। এসবই প্রাণীর প্রতি তার সংবেদনশীলতার দিক। উদ্দীপকের সুমনও তার পোষা বিড়ালের প্রতি যে ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ দেখিয়েছে এবং বিড়ালটির কষ্ট দেখে ব্যথিত হয়েছে, তা সুমনের মানবিকতার প্রমাণ। প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি, তাদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল থাকা মানুষের উন্নত মানসিকতার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল, তার পক্ষে অন্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াও সহজ। এই গল্প ও উদ্দীপক উভয়ই আমাদের শেখায় যে, মানবিকতা কেবল মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সকল জীবের প্রতি প্রসারিত হওয়া উচিত। প্রাণীর প্রতি এই সংবেদনশীলতাই মানবজাতিকে অন্য সকল জীব থেকে আলাদা করে এবং মানবিক মূল্যবোধকে উচ্চতর করে তোলে।

এভাবে আপনার পাঠ্যবইয়ের অন্যান্য গল্প ও কবিতা থেকেও সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর তৈরি করে অনুশীলন করতে পারেন।

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...