আমার পথ: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর কাজী নজরুল ইসলামের "আমার পথ" প্রবন্ধ থেকে নির্বাচিত প্রশ্ন ও উত্তর - Path Bari – পাঠ থেকে বাড়ি পর্যন্ত শিক্ষার আলো
শিক্ষা, অনুপ্রেরণা এবং ক্যারিয়ার গাইডলাইনের এক বিশ্বস্ত ঠিকানায় আপনার পদচারণাকে আমরা জানাই আন্তরিক অভিনন্দন Path Bari
Posts

আমার পথ: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর কাজী নজরুল ইসলামের "আমার পথ" প্রবন্ধ থেকে নির্বাচিত প্রশ্ন ও উত্তর

আমার পথ: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

আমার পথ: সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

কাজী নজরুল ইসলামের "আমার পথ" প্রবন্ধ থেকে নির্বাচিত প্রশ্ন ও উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ১

উদ্দীপক:

রফিক সাহেব একজন সৎ ও নীতিবান ব্যক্তি। তিনি কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন না। সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার। অনেকেই তাকে অহংকারী মনে করে, কিন্তু তিনি নিজের নীতি থেকে একচুলও সরে আসেন না। তিনি মনে করেন, নিজের বিবেকই তার একমাত্র পথপ্রদর্শক।

ক. "আমার পথ" প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত?

"আমার পথ" প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ 'রুদ্র-মঙ্গল' থেকে সংকলিত।

খ. "অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকলে বাইরের কোনো ভয়ই কিছু করতে পারে না" - ব্যাখ্যা করো।

উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের 'আমার পথ' প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রাবন্ধিক আত্মবিশ্বাসের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, যদি মানুষের অন্তর মিথ্যার ভয়ে ভীত না হয়, অর্থাৎ সে যদি সত্যের প্রতি অবিচল থাকে, তাহলে বাইরের কোনো হুমকি, চাপ বা ভীতি তাকে তার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। যার অন্তরে ভীরুতা বা কপটতা থাকে, সেই কেবল বাইরের প্রতিকূলতাকে ভয় পায়। আত্মাকে চিনে নিজের সত্যের ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারলেই মানুষ নির্ভীক হয়ে ওঠে।

গ. উদ্দীপকের রফিক সাহেবের মধ্যে "আমার পথ" প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উদ্দীপকের রফিক সাহেবের মধ্যে "আমার পথ" প্রবন্ধের **আত্মনির্ভরতা, সত্যনিষ্ঠা এবং ভণ্ডামির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের** দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক যেমন নিজের সত্যকে পথপ্রদর্শক মেনে রাজভয় বা লোকভয়কে পরোয়া করেন না, তেমনি রফিক সাহেবও নিজের নীতি থেকে বিচ্যুত হন না। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তার সোচ্চার কণ্ঠ প্রাবন্ধিকের 'অভিশাপ-রথের সারথি' হয়ে মিথ্যাকে দূর করার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। রফিক সাহেবকে অনেকে অহংকারী মনে করলেও, তা প্রাবন্ধিকের ভাষায় "মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো" – এই ভাবনারই প্রতিচ্ছবি। নিজের বিবেককে একমাত্র পথপ্রদর্শক মনে করা রফিক সাহেবের আত্মনির্ভরশীলতার পরিচয় দেয়, যা প্রাবন্ধিকের "আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য" এই উক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ঘ. "আত্মশক্তির জাগরণই স্বাধীনতা অর্জনের পাথেয়" - উদ্দীপক ও "আমার পথ" প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

"আত্মশক্তির জাগরণই স্বাধীনতা অর্জনের পাথেয়" - মন্তব্যটি উদ্দীপক ও "আমার পথ" প্রবন্ধ উভয় প্রেক্ষাপটেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। "আমার পথ" প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে আত্মবিশ্বাসী, সত্যনিষ্ঠ ও নির্ভীক হতে বলেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষ যখন নিজের আত্মাকে চিনবে এবং নিজের সত্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, তখনই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব। অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বা কোনো মহাপুরুষের ওপর অন্ধ ভক্তি রেখে স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়, কারণ এতে পরনির্ভরশীলতা বাড়ে এবং মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

উদ্দীপকের রফিক সাহেবও নিজের আত্মবিশ্বাস ও সত্যনিষ্ঠার মাধ্যমে নিজের পথ নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি কারো কাছে মাথা নত করেন না এবং নিজের নীতি থেকে একচুলও সরে আসেন না। এই মনোভাবই আত্মশক্তির জাগরণ। যখন একটি জাতি বা সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি রফিক সাহেবের মতো আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন তারা সম্মিলিতভাবে যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। প্রাবন্ধিক বলেছেন, "এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব, তার আগে কিছুতেই নয়।" তাই বলা যায়, আত্মশক্তির জাগরণই যেকোনো স্বাধীনতা অর্জনের মূল চালিকা শক্তি।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২

উদ্দীপক:

গ্রামের মাতব্বর শফিক সাহেব তার প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের সবাইকে নিজের বশে রাখতে চান। তিনি যা বলেন, সেটাই যেন আইন। কেউ তার কথার বিরোধিতা করলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়। গ্রামের কিছু মানুষ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে চায়, কিন্তু মাতব্বরের ভয়ে তারা সাহস পায় না। কেবল তরুণ শিক্ষক আকবর সাহেব শফিক সাহেবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং গ্রামবাসীকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন।

ক. নজরুল "আমার পথ" প্রবন্ধে প্রথমে কাকে সালাম জানিয়েছেন?

নজরুল "আমার পথ" প্রবন্ধে প্রথমে সত্যকে সালাম জানিয়েছেন।

খ. "অহংকারের পৌরুষ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক ভালো" - ব্যাখ্যা করো।

উক্তিটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলাম বুঝিয়েছেন যে, অতিমাত্রায় বিনয় অনেক সময় মানুষকে দুর্বল ও ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। মানুষ নিজের সত্যকে, নিজের আত্মবিশ্বাসকে অস্বীকার করে কেবল অন্যের মন জুগিয়ে চলতে চায়। এতে মানুষ নিজের প্রতি আস্থা হারায় এবং পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, যে আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের সত্যকে প্রকাশ করে, তাকে লোকে অহংকার মনে করলেও তা আসলে আত্মমর্যাদাবোধের প্রকাশ। এই ধরনের "অহংকার" মানুষের মধ্যে দৃঢ়তা ও পৌরুষ নিয়ে আসে, যা মিথ্যা ও কপট বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক ও প্রয়োজনীয়।

গ. উদ্দীপকের শফিক সাহেবের কর্মে "আমার পথ" প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে এবং কীভাবে?

উদ্দীপকের শফিক সাহেবের কর্মকাণ্ডে "আমার পথ" প্রবন্ধের **গোলামি মনোভাব ও ভণ্ডামির** দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। শফিক সাহেব নিজের প্রভাব খাটিয়ে গ্রামবাসীকে বশে রাখতে চান এবং তার বিরোধিতা করলে হেনস্তা করেন। এটি এক ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব, যা আত্মমর্যাদাহীনতার জন্ম দেয়। প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক অন্যের উপর নির্ভরতাকে 'গোলামি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। শফিক সাহেবের ভয়ে গ্রামবাসীদের নীরব থাকা তাদের অন্তরের ভয়েরই প্রকাশ, যা প্রাবন্ধিকের "যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়" উক্তিটির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। শফিক সাহেবের এই ধরনের কার্যকলাপ সমাজে ভণ্ডামি ও অন্যায়ের জন্ম দেয়, যা নজরুল তার প্রবন্ধে ঘৃণা করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানিয়েছেন।

ঘ. আকবর সাহেবের কর্মকাণ্ডে "আমার পথ" প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশিত মানুষের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে - বিশ্লেষণ করো।

আকবর সাহেবের কর্মকাণ্ডে "আমার পথ" প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশিত মানুষের স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে। নজরুল তার প্রবন্ধে এমন এক 'আমি'র আবাহন করেছেন, যে সত্য প্রকাশে নির্ভীক, অসংকোচ এবং কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে না। আকবর সাহেবও ঠিক তেমনই। তিনি শফিক সাহেবের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন এবং গ্রামবাসীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। এটি প্রাবন্ধিকের সেই প্রত্যাশিত আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক ও স্বাবলম্বী মানুষেরই প্রতীক। আকবর সাহেব নিজের বিবেককে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, যা প্রাবন্ধিকের "আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য" এই মূল ভাবনার সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ। তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে এবং আত্মনির্ভরশীল হতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন, যা নজরুলের স্বাধীনতা অর্জনের প্রধান পাথেয় হিসেবে বিবেচিত। আকবর সাহেব যেন সেই "অভিশাপ-রথের সারথি", যিনি সমাজের সকল মিথ্যা ও ভণ্ডামি দূর করে সত্য ও ন্যায়ের পথ প্রতিষ্ঠা করতে চান।

© 2025 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...