এসএসসি বাংলা ১ম পত্র: ১১টি নমুনা সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: শুভা (গদ্য)
উদ্দীপক: সিফাত বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার সমবয়সীরা তাকে খেলায় নেয় না। মা-বাবা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকেন। একমাত্র তার ছোট বোন রিফা তার কষ্টটা বোঝে। সে সবসময় সিফাতের সাথে ইশারায় কথা বলে, তার সাথে খেলা করে। সিফাতের পোষা বিড়াল আর কিছু গাছপালাও যেন তার খুব ভালো বন্ধু। তাদের সাথেই সে তার সব অনুভূতি ভাগ করে নেয়।
প্রশ্ন: ক. শুভার গ্রামের নাম কী? খ. প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত—কেন? গ. উদ্দীপকের সিফাতের সাথে ‘শুভা’ গল্পের শুভার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো। ঘ. "সিফাতের বোন রিফা এবং প্রতাপের ভূমিকা এক হলেও তাদের অনুভূতি ভিন্ন" – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. শুভার গ্রামের নাম চণ্ডীপুর।
খ. প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত কারণ সে প্রকৃতি ও মূক প্রাণের সান্নিধ্য ভালোবাসত। প্রতাপ ছিপ ফেলে মাছ ধরার সময় কথা বলার সঙ্গী হিসেবে একজন নীরব শ্রোতা খুঁজত। শুভা সেই নীরব শ্রোতার ভূমিকা পালন করত। তার এই নীরব উপস্থিতি প্রতাপের কাছে মূল্যবান ছিল, যা অন্য কেউ বুঝত না। তাই বলা যায়, প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।
গ. উদ্দীপকের সিফাত এবং ‘শুভা’ গল্পের শুভার মধ্যে প্রধান সাদৃশ্য হলো উভয়েই বাক্প্রতিবন্ধী এবং একাকিত্বের শিকার। শুভা কথা বলতে পারত না বলে তার কোনো সঙ্গী ছিল না। গ্রামের ছেলেমেয়েরা তাকে এড়িয়ে চলত। তার জগৎ ছিল তার পোষা দুটি গাভী, ছাগলছানা ও বিড়ালকে নিয়ে। ঠিক তেমনি, উদ্দীপকের সিফাতও বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমবয়সীদের অবহেলার শিকার হয় এবং তার সঙ্গী হয় ছোট বোন, পোষা বিড়াল ও গাছপালা। দুজনের জীবনই মানুষের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠেছে। এই একাকিত্ব এবং প্রকৃতির সাথে মিতালিই তাদের সাদৃশ্যের মূল ভিত্তি।
ঘ. উদ্দীপকের রিফা এবং ‘শুভা’ গল্পের প্রতাপ উভয়েই প্রধান চরিত্রের একাকিত্বের জীবনে সঙ্গী হিসেবে ভূমিকা পালন করলেও তাদের অনুভূতির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। রিফা তার ভাই সিফাতের প্রতি গভীর মমতা ও ভালোবাসা থেকে তার সঙ্গী হয়েছে। সে সিফাতের কষ্ট বোঝে এবং তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মেশে। এটি সম্পূর্ণই স্নেহ ও সহানুভূতির সম্পর্ক।
অন্যদিকে, প্রতাপের সঙ্গে শুভার সম্পর্কটি ছিল মূলত প্রয়োজন ও অভ্যাসের। প্রতাপ যখন মাছ ধরত, তখন তার একজন নীরব সঙ্গী দরকার ছিল। শুভা সেই প্রয়োজন পূরণ করত। শুভার প্রতি তার কিছুটা সহানুভূতি থাকলেও রিফার মতো গভীর মমতা বা দায়িত্ববোধ ছিল না। প্রতাপের কাছে শুভার সঙ্গ ছিল তার মাছ ধরার অবসর কাটানোর একটি উপায় মাত্র, কিন্তু রিফার কাছে সিফাতের সঙ্গ ছিল তার ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। তাই বলা যায়, তাদের ভূমিকা এক হলেও অনুভূতির গভীরতায় তারা ভিন্ন।
প্রশ্ন ২: বই পড়া (গদ্য)
উদ্দীপক: রিয়ান সাহেব তার এলাকায় একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু এলাকার তরুণদের সেখানে আনাগোনা নেই বললেই চলে। তারা স্মার্টফোনে গেম খেলে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটাতেই বেশি আগ্রহী। রিয়ান সাহেব মনে করেন, বই পড়ার অভ্যাস ছাড়া তরুণদের চিন্তার জগৎ প্রসারিত হবে না এবং তারা প্রকৃত শিক্ষাও লাভ করতে পারবে না।
প্রশ্ন: ক. ডেমোক্রেসি কীসের সদ্গুণে মহিমান্বিত হয়ে ওঠে? খ. ‘মনের দাবি রক্ষা না করলে মানুষের আত্মা বাঁচে না’—কেন? গ. উদ্দীপকের রিয়ান সাহেবের ভাবনা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের লেখকের ভাবনার সাথে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। ঘ. উদ্দীপকের তরুণদের অবস্থার পরিবর্তনে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের আলোকে তোমার সুপারিশ তুলে ধরো।
নমুনা উত্তর: ক. ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র লাইব্রেরির সদ্গুণে মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।
খ. ‘মনের দাবি রক্ষা না করলে মানুষের আত্মা বাঁচে না’—কারণ মনকে সজীব ও সতেজ রাখতে না পারলে মানুষের মানসিক মৃত্যু ঘটে। মানুষের দুটি সত্তা—একটি দৈহিক, অন্যটি মানসিক। দেহের দাবি মেটাতে আমরা অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করি। কিন্তু মনেরও চাহিদা আছে, যা হলো জ্ঞান ও আনন্দ। বই পড়ার মাধ্যমে মন সেই খোরাক পায়, বিকশিত হয় এবং চিন্তাশক্তি বাড়ে। মনের এই দাবি পূরণ না হলে মানুষের আত্মা বা মননশীল সত্তা স্থবির হয়ে পড়ে, তাই বলা হয় তার আত্মা বাঁচে না।
গ. উদ্দীপকের রিয়ান সাহেবের ভাবনা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের লেখকের ভাবনার সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। প্রমথ চৌধুরী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন যে, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান মানুষের চিন্তাশক্তিকে মুক্তি দিতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন স্বশিক্ষিত হওয়া, যা লাইব্রেরিতে বই পড়ার মাধ্যমে সম্ভব। বই পড়লে মানুষের মনের দরজা খুলে যায়, চিন্তার জগৎ প্রসারিত হয়। রিয়ান সাহেবও ঠিক यही উপলব্ধি করেছেন। তিনি দেখেছেন, তরুণরা বই ছেড়ে প্রযুক্তি-নির্ভর বিনোদনে মত্ত, যা তাদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই তিনিও মনে করেন, বই পড়ার অভ্যাস ছাড়া তরুণদের প্রকৃত শিক্ষা ও মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়, যা লেখকের মূল বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।
ঘ. উদ্দীপকের তরুণদের অবস্থার পরিবর্তনে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের আলোকে আমার সুপারিশগুলো নিম্নরূপ: ১. স্বেচ্ছায় বই পড়তে উৎসাহিত করা: তরুণদের উপর জোর করে বই চাপিয়ে না দিয়ে, তাদের পছন্দের বিষয়ের বই পড়তে উৎসাহিত করতে হবে। লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধরনের বই (গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞান, ভ্রমণকাহিনি) রাখতে হবে যাতে তারা নিজেদের আগ্রহ অনুযায়ী বই বেছে নিতে পারে। ২. লাইব্রেরির গুরুত্ব বোঝানো: ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে যেমন বলা হয়েছে, লাইব্রেরি হলো মনের হাসপাতাল। তরুণদের বোঝাতে হবে যে, পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও একটি জগৎ আছে এবং লাইব্রেরি সেই জগতের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। ৩. শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় লাইব্রেরি এবং বই পড়াকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে হবে এবং এর জন্য পুরস্কার বা নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ৪. পারিবারিক উদ্যোগ: পরিবার থেকে শিশুদের বই কিনে দেওয়া এবং তাদের সাথে বই নিয়ে আলোচনা করার একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে তরুণ সমাজ বই পড়ার দিকে ঝুঁকবে এবং তাদের মানসিক জগতের উন্নতি ঘটবে।
প্রশ্ন ৩: কপোতাক্ষ নদ (পদ্য)
উদ্দীপক: লন্ডনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়েও হাসান সাহেব তার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রূপসা নদীকে ভুলতে পারেন না। প্রায়ই তার মনে পড়ে শৈশবের সেই দিনগুলো, যখন তিনি বন্ধুদের সাথে নদীতে সাঁতার কাটতেন, মাছ ধরতেন। বিদেশের আধুনিক জীবনযাত্রাও তাকে সেই স্মৃতি থেকে দূরে সরাতে পারে না।
প্রশ্ন: ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কোন ধরনের কবিতা? খ. কবি কপোতাক্ষকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন কেন? গ. উদ্দীপকের হাসান সাহেবের অনুভূতির সাথে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির অনুভূতির সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। ঘ. "উদ্দীপকটি কবিতার মূলভাবকে ধারণ করলেও কবির দেশপ্রেমের গভীরতা সম্পূর্ণ প্রকাশ করে না"– বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি একটি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা।
খ. কবি কপোতাক্ষকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন কারণ শৈশবে তিনি এই নদের জল মায়ের দুধের মতোই পান করে তৃষ্ণা মেটাতেন ও বড় হয়েছেন। মায়ের স্নেহের মতোই এই নদের জল তার দেহ ও মনকে পুষ্ট করেছে। তাই মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে তিনি এর জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের হাসান সাহেব এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির অনুভূতির মধ্যে গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। দুজনই নিজ দেশ ও শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নদীর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও কাতরতা অনুভব করছেন। হাসান সাহেব লন্ডনে থেকেও যেমন তার গ্রামের রূপসা নদীকে ভুলতে পারেন না, তেমনি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও ফ্রান্সে বসে তার শৈশবের কপোতাক্ষ নদকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করেন। दोघाঁদের মনেই শৈশবের স্মৃতি অমলিন এবং বিদেশ জীবনের চাকচিক্য সেই স্মৃতিকে ম্লান করতে পারেনি। এই স্মৃতি-কাতরতা এবং দেশের মাটির প্রতি টানই তাদের অনুভূতির মূল সাদৃশ্য।
ঘ. মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকটিতে হাসান সাহেবের মাধ্যমে শৈশবের নদীর প্রতি স্মৃতি-কাতরতা ফুটে উঠেছে, যা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার একটি প্রধান দিক। তবে, কবিতাটির মূলভাব আরও গভীর। কবি শুধু স্মৃতিচারণ করেই থেমে থাকেননি, তিনি কপোতাক্ষের কাছে মিনতি করেছেন যেন সে তার কথা বঙ্গবাসীর কাছে পৌঁছে দেয়। এর মাধ্যমে তার গভীর দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের কাছে অমর হয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কপোতাক্ষকে প্রজারূপে রাজাকে কর দেওয়ার সাথে তুলনা করে দেশের প্রতি তার ভালোবাসার ঋণ প্রকাশ করেছেন। উদ্দীপকে হাসান সাহেবের অনুভূতিতে কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাই প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু কবির মতো দেশের প্রতি গভীর প্রেম, আত্মনিবেদন এবং অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি কবিতার আংশিক ভাবকে ধারণ করলেও কবির দেশপ্রেমের সম্পূর্ণ গভীরতা প্রকাশে ব্যর্থ।
প্রশ্ন ৪: মানুষ (পদ্য)
উদ্দীপক: лютый শীতে রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধ ভিখারি কাঁপছিল। একজন ধনী ব্যক্তি গাড়ি থামিয়ে তাকে একটি ছেঁড়া কম্বল ছুড়ে দিয়ে চলে গেলেন। ভিখারিটি কম্বল পেয়ে খুশি হলেও তার মনে হলো, মানুষ হিসেবে তার কোনো সম্মান নেই। কিছুক্ষণ পর এক তরুণ এসে তাকে নিজের গায়ের চাদরটি দিয়ে জড়িয়ে ধরে এবং একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে গরম চা খাওয়ায়। বৃদ্ধের চোখ জলে ভরে আসে।
প্রশ্ন: ক. পূজারি মন্দির খুলে দেয় কেন? খ. ‘Expected power, but got bread instead.’ – চরণটির অর্থ কী? গ. উদ্দীপকের ধনী ব্যক্তিটির আচরণ ‘মানুষ’ কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "তরুণের আচরণই ‘মানুষ’ কবিতার মূল সুরকে ধারণ করে"– উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
নমুনা উত্তর: ক. পূজারি দেবতার স্বপ্ন দেখে মন্দির খুলে দেয়।
খ. ‘Expected power, but got bread instead.’ – এই চরণটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, মোল্লা সাহেব মসজিদের রুটি-মাংসের অধিকারকে নিজের ক্ষমতা হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন, কিন্তু যখন ক্ষুধার্ত পথিক সেই অধিকারের ভাগ চাইল, তখন তিনি তা দিতে অস্বীকার করলেন। পথিক বোঝাতে চেয়েছিল, সে মসজিদের সম্পদকে মোল্লার ব্যক্তিগত ক্ষমতা হিসেবে দেখেনি, বরং তা সকলের জন্য প্রাপ্য খাদ্য হিসেবে দেখেছিল।
গ. উদ্দীপকের ধনী ব্যক্তিটির আচরণ ‘মানুষ’ কবিতার পূজারি ও মোল্লা চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। ‘মানুষ’ কবিতায় পূজারি এবং মোল্লা উভয়েই ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে সাহায্য না করে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারা তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পদকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেছিল এবং আর্তের সেবা না করে নিজেদের স্বার্থ দেখেছিল। উদ্দীপকের ধনী ব্যক্তিটিও তেমনি। তিনি ছেঁড়া কম্বল ছুড়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে ভিখারির প্রতি কোনো সম্মান বা সহানুভূতি দেখাননি। তার আচরণে মানবতার চেয়ে আত্ম-অহংকারই বেশি প্রকাশ পেয়েছে, যা পূজারি ও মোল্লার আচরণের অনুরূপ।
ঘ. উক্তিটি সম্পূর্ণ যথার্থ। ‘মানুষ’ কবিতার মূল সুর হলো ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া। কবি কাজী নজরুল ইসলাম দেখিয়েছেন যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রক্ষকরা যখন মানবতার সেবা করতে ব্যর্থ হয়, তখন সাধারণ মানুষই সেই দায়িত্ব পালন করে। উদ্দীপকের তরুণটি ঠিক সেই কাজটিই করেছে। সে শুধু বস্তুগত সাহায্য (চাদর) করেই থেমে থাকেনি, বরং বৃদ্ধ ভিখারিকে সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছে। তার এই আচরণে কোনো অহংকার ছিল না, ছিল নিখাদ মানবপ্রেম। এটিই কবিতার মূল বার্তা— কোনো মন্দির বা মসজিদের চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক বেশি এবং মানুষের সেবা করাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তরুণের আচরণে এই মানবতাবাদী আদর্শই মূর্ত হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৫: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব (গদ্য)
উদ্দীপক: করিম সাহেব উচ্চশিক্ষিত এবং একটি বড় পদে চাকরি করেন। তার অনেক টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি সবই আছে। কিন্তু তিনি প্রতিবেশীদের বিপদে এগিয়ে আসেন না, সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায় না। তিনি মনে করেন, এসব করে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তার ছেলেকেও তিনি শুধু ভালো ফলাফলের জন্য চাপ দেন, মানবিক গুণাবলি অর্জনের কথা বলেন না।
প্রশ্ন: ক. অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও কী বড়? খ. ‘শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি’—কেন? গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের মধ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিকটির অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. করিম সাহেবের ছেলের ভবিষ্যৎ পরিণতি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়েও মুক্তি বড়।
খ. ‘শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয়, মূল্যবোধ সৃষ্টি’—কারণ মূল্যবোধ ছাড়া জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করতে পারে না। শুধু তথ্য বা জ্ঞান অর্জন করলে মানুষ শিক্ষিত হতে পারে, কিন্তু মনুষ্যত্বসম্পন্ন হয় না। মূল্যবোধ মানুষকে ভালো-মন্দ বিচার করতে শেখায়, অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তোলে এবং জীবনকে সুন্দরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। জ্ঞান যদি মূল্যবোধের ভিত্তি पर प्रतिष्ठित না হয়, তবে তা মানুষের উপকারের পরিবর্তে অপকারও করতে পারে। তাই শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
গ. উদ্দীপকের করিম সাহেবের মধ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মনুষ্যত্ববোধের দিকটির চরম অভাব রয়েছে। প্রবন্ধে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষা মানুষকে দুটি সত্তা দেয়—জীবসত্তা ও মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। জীবসত্তার কাজ হলো অন্নবস্ত্রের সংস্থান করা, যা করিম সাহেব সফলভাবে করেছেন। কিন্তু শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো মানবসত্তাকে জাগ্রত করা, যা মানুষকে অপরের প্রতি মমত্ববোধ, সামাজিক দায়িত্ব এবং সাংস্কৃতিক রুচিতে উন্নত করে। করিম সাহেব উচ্চশিক্ষিত হয়েও এই মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারেননি। তিনি আত্মকেন্দ্রিক এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি উদাসীন। তার কাছে অর্থই সবকিছু, মানবিক গুণাবলির কোনো মূল্য নেই। প্রবন্ধের ভাষায়, তিনি শিক্ষার ‘নিচের তলার’ বাসিন্দা, ‘উপরের তলায়’ অর্থাৎ মনুষ্যত্বের জগতে পৌঁছাতে পারেননি।
ঘ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বলা যায় যে, করিম সাহেবের ছেলের ভবিষ্যৎ পরিণতি ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, তাকে শুধু জীবসত্তার প্রয়োজন মেটানোর শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, মনুষ্যত্ব অর্জনের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। প্রবন্ধ অনুসারে, যে শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সাহায্য করে না, তা আসলে সুশিক্ষা নয়। করিম সাহেবের ছেলে হয়তো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে বাবার মতোই বড় চাকরি বা ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবে। সে জীবসত্তার দিক থেকে সফল হবে। কিন্তু বাবার মতো তার মধ্যেও মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটবে না। সেও আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর এবং সামাজিক দায়িত্বহীন একজন মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠবে। তার জীবন হবে অর্থসর্বস্ব, কিন্তু প্রকৃত আনন্দ ও মুক্তির স্বাদ সে পাবে না। তার শিক্ষা তাকে ‘লেফাফাদুরস্তি’ বা বাইরের চাকচিক্য দেবে, কিন্তু ভেতরের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে ব্যর্থ হবে। ফলে সে একজন শিক্ষিত কিন্তু অসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবেই জীবন কাটাবে।
প্রশ্ন ৬: আম আঁটির ভেঁপু (গদ্য)
উদ্দীপক: শহরের ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দি শিশু রিমি। তার খেলার কোনো মাঠ নেই, সঙ্গী নেই। সে জানালার গ্রিল ধরে তাকিয়ে দেখে বাইরের ব্যস্ত রাস্তা। তার মা তাকে দামি দামি খেলনা কিনে দেন, কিন্তু রিমি খুঁজে ফেরে এক টুকরো সবুজ, এক ঝলক মুক্ত বাতাস। তার খুব ইচ্ছে করে গ্রামে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে, আম কুড়াতে।
প্রশ্ন: ক. অপু কীসের জন্য মায়ের কাছে পয়সা চেয়েছিল? খ. দুর্গা কেন তার নতুন পুঁতির মালা অপুকে দেখায়? গ. উদ্দীপকের রিমি ও ‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অপুর শৈশবের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো। ঘ. "রিমি ও অপুর পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও উভয়ের আকাঙ্ক্ষা একই"— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. অপু মায়ের কাছে নাগরদোলায় চড়ার জন্য পয়সা চেয়েছিল।
খ. দুর্গা তার নতুন পুঁতির মালা অপুকে দেখায় কারণ অপু ছিল তার একমাত্র খেলার সঙ্গী ও গোপন কথার ভাগীদার। দুর্গা চঞ্চল প্রকৃতির এবং নতুন কিছু পেলে তা অন্যকে দেখানোর জন্য উদগ্রীব থাকত। অপু ছিল তার সবচেয়ে কাছের জন, যার কাছে সে তার সব আনন্দ-অভিমান প্রকাশ করতে পারত। তাই পুঁতির মালাটি পেয়ে সে তার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্যই অপুকে তা দেখিয়েছিল।
গ. উদ্দীপকের রিমি ও ‘আম আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অপুর শৈশবের মধ্যে সুস্পষ্ট বৈসাদৃশ্য রয়েছে। রিমি শহরের এক বন্দি শিশু, যার জীবন আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় পূর্ণ হলেও প্রকৃতির সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। তার শৈশব কাটে চার দেয়ালের মাঝে, কৃত্রিম খেলনা নিয়ে। অন্যদিকে, অপুর শৈশব কেটেছে গ্রামে, প্রকৃতির মুক্ত কোলে। তার জীবনে দারিদ্র্য ছিল, কিন্তু ছিল অফুরন্ত স্বাধীনতা। সে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াত, দিদির সাথে আম কুড়াত, পাখির ডাক শুনত। তার শৈশব ছিল প্রকৃতির নানা উপকরণে সমৃদ্ধ— কাঁচা আম, বুনো ফল, পাখির বাসা, রেলগাড়ি দেখা ইত্যাদি। রিমি যেখানে একাকিত্বে ভোগে, অপু সেখানে দিদির সঙ্গ ও প্রকৃতির বিশালতায় এক আনন্দময় শৈশব কাটায়। এই পরিবেশগত পার্থক্যই তাদের শৈশবের মূল বৈসাদৃশ্য।
ঘ. মন্তব্যটি যথার্থ। রিমি ও অপুর পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও উভয়ের আকাঙ্ক্ষা মূলে একই— আর তা হলো মুক্তি ও আনন্দের সন্ধান। রিমি শহরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায়। তার দামি খেলনার চেয়ে গ্রামের মুক্ত প্রকৃতি অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত। সে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সহজ ও স্বাভাবিক আনন্দ পেতে চায়, যা তার শহুরে জীবনে অনুপস্থিত। অন্যদিকে, অপুর জীবনে দারিদ্র্য থাকলেও সে প্রকৃতির মাঝেই আনন্দ খুঁজে নেয়। কিন্তু তারও আকাঙ্ক্ষা থাকে অজানাকে জানার, নতুন কিছু পাওয়ার। রেলগাড়ি দেখে তার দূরদেশে যাওয়ার স্বপ্ন জাগে, মায়ের কাছে সে নাগরদোলায় চড়ার পয়সা চায়। এগুলো তার محدود জীবন থেকে আরও বড় জগতে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষারই প্রতীক। সুতরাং, রিমি চায় যান্ত্রিকতা থেকে প্রকৃতির মাঝে মুক্তি, আর অপু চায় গ্রামীণ সীমাবদ্ধতা থেকে আরও বড় ও বৈচিত্র্যময় জীবনের দিকে মুক্তি। দুজনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং সহজ আনন্দ পাওয়ার বাসনা তাদের একসূত্রে গেঁথেছে।
প্রশ্ন ৭: জীবন-সঙ্গীত (পদ্য)
উদ্দীপক: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর রনি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। কয়েকটি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে সে হতাশ হয়ে পড়ে। তার বন্ধু সাকিব তাকে বোঝায় যে, জীবন মানে শুধু ব্যর্থতার হিসাব করা নয়। হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কারণ কর্মের মাধ্যমেই জীবনে সফলতা আসে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বা অতীতের জন্য আফসোস করে লাভ নেই, বর্তমানকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রশ্ন: ক. কবির মতে আমাদের কী হওয়া উচিত নয়? খ. ‘ভবের উন্নতি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ. উদ্দীপকের সাকিবের বক্তব্যে ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "রনির মতো মানুষদের জন্যই ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতাটি একটি মহৎ বার্তা বহন করে" – বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. কবির মতে আমাদের কাতর স্বরে ‘জীবন নিশার স্বপন’—এ কথা বলা উচিত নয়।
খ. ‘ভবের উন্নতি’ বলতে জাগতিক বা পৃথিবীর উন্নতিকে বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ হলো, পৃথিবীতে এমন কাজ করে যাওয়া যা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর এবং যা মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করে। শুধু নিজের জন্য না বেঁচে থেকে সমাজের ও দেশের জন্য অবদান রাখাই হলো ভবের উন্নতি।
গ. উদ্দীপকের সাকিবের বক্তব্যে ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতার মূল দর্শন অর্থাৎ কর্মনিষ্ঠা ও আশাবাদের দিকটি ফুটে উঠেছে। কবিতায় কবি বলেছেন, জীবন কেবল স্বপ্ন বা মায়া নয়, এটি একটি যুদ্ধক্ষেত্র যেখানে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। অতীত নিয়ে সুখ বা দুঃখ করে লাভ নেই, ভবিষ্যতের উপরও নির্ভর করা বৃথা। আমাদের উচিত বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে জগতে অমর কীর্তি স্থাপন করা। সাকিবও তার বন্ধু রনিকে ঠিক সেই কথাই বলছে। সে রনিকে হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেছে এবং বর্তমানকে কাজে লাগানোর গুরুত্ব বুঝিয়েছে। এই ইতিবাচক ও কর্মমুখী দৃষ্টিভঙ্গিই কবিতার মূল সুরের প্রতিচ্ছবি।
ঘ. মন্তব্যটি সম্পূর্ণ যথার্থ। ‘জীবন-সঙ্গীত’ কবিতাটি মূলত হতাশাগ্রস্ত ও লক্ষ্যহীন মানুষদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা। রনির মতো অনেকেই জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে এবং জীবনকে অর্থহীন মনে করে। তারা অতীতের ব্যর্থতা নিয়ে আফসোস করে এবং ভবিষ্যতের ভয়ে বর্তমানকে কাজে লাগাতে পারে না। কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের মানুষদের জন্যই বলেছেন, জীবন একটি অমূল্য সম্পদ এবং একে বৃথা যেতে দেওয়া উচিত নয়। ভয়, निराशा বা অলসতাকে জয় করে কর্মের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের সার্থকতা। তিনি সময়ের সদ্ব্যবহার, সাহসী হওয়া এবং পৃথিবীতে নিজের চিহ্ন রেখে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। রনি যদি এই কবিতার বার্তা গ্রহণ করে, তবে সে তার হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং নতুন উদ্যমে কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সুতরাং, এই কবিতাটি রনির মতো তরুণদের জন্য আশার আলো এবং সঠিক পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন ৮: মমতাদি (গদ্য)
উদ্দীপক: রহিমা বেগম অভাবের তাড়নায় এক বাসায় কাজ নেন। প্রথমদিকে তিনি বাড়ির সবার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। কিন্তু বাড়ির ছোট মেয়েটির নির্মল ভালোবাসা ও আন্তরিক ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ হন। ধীরে ধীরে তিনি মেয়েটির সাথে সহজ হয়ে যান এবং তাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসতে শুরু করেন। তার সব কাজে তখন আন্তরিকতার ছোঁয়া লাগে।
প্রশ্ন: ক. ‘মমতাদি’ কোন বাড়ির গাড়িবারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল? খ. ‘ছেলে তাকে ভালোবাসে, তাঁর দাম কম নয়’—কেন? গ. উদ্দীপকের রহিমার পরিবর্তনের সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির পরিবর্তনের সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "ছোট্ট ছেলেটির ভূমিকাই মমতাদির আত্মমর্যাদাবোধ ও ভালোবাসার সেতুবন্ধন রচনা করেছে"— গল্পের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. ‘মমতাদি’ বাইশ নম্বর বাড়ির গাড়িবারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল।
খ. ‘ছেলে তাকে ভালোবাসে, তাঁর দাম কম নয়’—কারণ মমতাদির কাছে স্নেহ ও ভালোবাসার মূল্য অর্থের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তিনি অভাবের কারণে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, কিন্তু তার আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রবল। যখন তিনি দেখলেন, বাড়ির ছোট ছেলেটি তাকে নিছক কাজের লোক হিসেবে না দেখে ভালোবেসেছে, তখন তার সঙ্কোচ ও জড়তা কেটে যায়। এই ভালোবাসা তার আত্মমর্যাদাকে আহত না করে বরং সম্মানিত করেছে। তাই এই ভালোবাসার মূল্য তার কাছে অনেক বেশি ছিল।
গ. উদ্দীপকের রহিমা এবং ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির পরিবর্তনের মধ্যে গভীর সাদৃশ্য বিদ্যমান। দুজনেই অভাবের কারণে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং প্রথমদিকে আত্মমর্যাদার কারণে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। মমতাদি প্রথমদিকে নিজেকে ‘বামুনদি’ বলে পরিচয় দেয় এবং কাজের বাইরে অতিরিক্ত কথা বলত না। তার আচরণে একটি দূরত্ব ও সঙ্কোচ ছিল। ঠিক তেমনি, রহিমাও সবার সাথে দূরত্ব বজায় রাখত। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই তাদের পরিবর্তন আসে বাড়ির ছোট সদস্যের আন্তরিক ভালোবাসার কারণে। গল্পের ছোট ছেলেটির ভালোবাসা পেয়ে মমতাদির সঙ্কোচ কেটে যায় এবং সে ছেলেটিকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে আপন করে নেয়। উদ্দীপকের রহিমাও ছোট মেয়েটির ভালোবাসা পেয়ে সহজ হয়ে ওঠে এবং তাকে বোনের মতো ভালোবাসে। এই স্নেহ ও ভালোবাসার স্পর্শই তাদের দুজনের ভেতরের আসল রূপটি বের করে এনেছে এবং তাদের কাজের মধ্যে আন্তরিকতা যুক্ত করেছে।
ঘ. মন্তব্যটি সম্পূর্ণ সঠিক। ‘মমতাদি’ গল্পে ছোট ছেলেটির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মমতাদি যখন প্রথম কাজে আসে, তখন সে ছিল একজন শঙ্কিত, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কিন্তু অপরিচিত নারী। বাড়ির অন্য সদস্যরা তাকে নিছক একজন গৃহকর্মী হিসেবেই দেখছিল। কিন্তু ছোট ছেলেটি তার নির্মল মন দিয়ে মমতাদির ভেতরের স্নেহপ্রবণ সত্তাটিকে আবিষ্কার করে। সে মমতাদিকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে, তার রান্নাঘরের পাশে বসে গল্প করে, তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চায়। ছেলেটির এই আন্তরিকতা ও ভালোবাসা মমতাদির আত্মমর্যাদাবোধকে আহত না করে, বরং তাকে সম্মান দেয়। এই ভালোবাসা পেয়েই মমতাদির ভেতরের জড়তা ও দূরত্ব কেটে যায়। সে ছেলেটিকে ‘আমার ভাই’ বলে গ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। ছেলেটির এই নিষ্পাপ আচরণই মমতাদির কঠিন আত্মমর্যাদার আবরণের নিচে থাকা কোমল হৃদয়ের সাথে বাড়ির মানুষদের একটি ভালোবাসার সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে। তাই বলা যায়, ছেলেটির ভূমিকাই ছিল এই গল্পের সম্পর্কের মূল ভিত্তি।
প্রশ্ন ৯: বঙ্গবাণী (পদ্য)
উদ্দীপক: আমেরিকায় বসবাসকারী ডা. রফিক তার সন্তানদের সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তিনি চান, তার সন্তানরা যেন শেকড়কে ভুলে না যায়। তার বন্ধু ডা. জামান এর বিরোধিতা করে বলেন, "আমেরিকায় থাকতে হলে ইংরেজিই সব। বাংলা শিখে কী হবে?" উত্তরে ডা. রফিক বলেন, "যে ভাষায় আমি আমার অনুভূতি সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারি, সেই ভাষাকে আমি ছাড়তে পারি না। মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রকৃত আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে।"
প্রশ্ন: ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে? খ. ‘সেই সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’—কবি কাদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন? গ. উদ্দীপকের ডা. জামানের মানসিকতার সাথে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কাদের মানসিকতার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "ডা. রফিকের চেতনাই যেন কবি আবদুল হাকিমের স্বদেশ ও স্বভাষা প্রেমের সার্থক প্রতিচ্ছবি"— উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবি আবদুল হাকিমের ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
খ. কবি সেইসব মানুষদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেও বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং অন্য ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কবি মনে করেন, যারা নিজের দেশের এবং নিজের মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগী নয়, তাদের জন্মপরিচয় ও বংশ সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। তাদের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কবি।
গ. উদ্দীপকের ডা. জামানের মানসিকতার সাথে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার সেইসব লোকের মানসিকতার মিল পাওয়া যায়, যারা স্বদেশের ভাষাকে অবজ্ঞা করে বিদেশি ভাষাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি বলেছেন, কিছু লোক আছে যারা বাংলা ভাষাকে হিংসা করে এবং বিদেশি ভাষার প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। ডা. জামানও আমেরিকায় বসবাসের কারণে ইংরেজি ভাষাকেই সবকিছু মনে করছেন এবং বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছেন। তার এই মানসিকতা সেইসব আত্মবিস্মৃত ও পরভাষাপ্রীত মানুষদেরই প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের কবি তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।
ঘ. উক্তিটি সম্পূর্ণ যথার্থ। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম তার মাতৃভাষা বাংলার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে দেশে তার জন্ম এবং যে ভাষায় তিনি তার মনের ভাব প্রকাশ করেন, সেই ভাষাই তার কাছে সবচেয়ে আপন। তিনি মনে করেন, আল্লাহ সব ভাষা বোঝেন এবং নিজ ভাষায় আল্লাহকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। উদ্দীপকের ডা. রফিকের চেতনাতেও ঠিক একই স্বদেশ ও স্বভাষা প্রেম ফুটে উঠেছে। তিনি বিদেশে থেকেও তার মাতৃভাষাকে ভোলেননি এবং সন্তানদেরও সেই ভাষায় শিক্ষিত করতে চান। তার কাছে মাতৃভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি তার আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। তিনি বিশ্বাস করেন, মাতৃভাষার মাধ্যমেই নিজের অনুভূতি সবচেয়ে ভালোভাবে প্রকাশ করা যায়। কবির মতো তিনিও বিদেশি ভাষার গুরুত্ব স্বীকার করেন, কিন্তু মাতৃভাষাকে তার ঊর্ধ্বে স্থান দেন। এই গভীর মমত্ববোধ ও আত্মপরিচয়ের চেতনা ডা. রফিককে কবি আবদুল হাকিমের সার্থক উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিভাত করে।
প্রশ্ন ১০: মানুষ মুহম্মদ (স.) (গদ্য)
উদ্দীপক: গ্রামের প্রধান জলিল সাহেব অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। একবার তার ছেলে গ্রামের এক গরিব কৃষককে অন্যায়ভাবে মারধর করে। গ্রামের সবাই ভয়ে চুপ থাকলেও শিক্ষক আমজাদ সাহেব এর প্রতিবাদ করেন এবং জলিল সাহেবের কাছে বিচার চান। জলিল সাহেব ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে বলেন, "আমার ছেলের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস তোমার কী করে হলো?" আমজাদ সাহেব নির্ভীকভাবে উত্তর দেন, "সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে আমি ভয় পাই না। আপনার ছেলে অন্যায় করেছে এবং এর বিচার হতেই হবে।"
প্রশ্ন: ক. তায়েফ piedra ছুড়ে কারা মহানবী (স.)-কে রক্তাক্ত করেছিল? খ. হযরত মুহম্মদ (স.) কীভাবে মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন? গ. উদ্দীপকের আমজাদ সাহেবের চরিত্রে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর কোন গুণের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "জলিল সাহেবের আচরণ ক্ষমতার দম্ভের পরিচায়ক, যা হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত"— প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. তায়েফের বিধর্মী প্রস্তর নিক্ষেপকারীরা মহানবী (স.)-কে রক্তাক্ত করেছিল।
খ. হযরত মুহম্মদ (স.) তার মহৎ আদর্শ, ক্ষমা, উদারতা, এবং মানবতার প্রতি গভীর ভালোবাসা দিয়ে মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। তিনি ছিলেন ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও একজন সাধারণ মানুষ। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন, শত্রুকেও ক্ষমা করতেন এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকতেন। তার এই অসাধারণ গুণাবলির জন্যই তিনি মৃত্যুর পরেও মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত।
গ. উদ্দীপকের আমজাদ সাহেবের চরিত্রে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার গুণের প্রতিফলন ঘটেছে। মহানবী (স.) জীবনে কখনো সত্য ও ন্যায় থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ক্ষমতাধর কুরাইশদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একাই দাঁড়িয়েছিলেন এবং শত বাধার মুখেও সত্য প্রচারে নির্ভীক ছিলেন। আমজাদ সাহেবও গ্রামের প্রভাবশালী জলিল সাহেবের ছেলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি ক্ষমতার ভয়ে ভীত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তার এই দৃঢ়তা ও সাহসিকতা মহানবী (স.)-এর চারিত্রিক আদর্শেরই প্রতিফলন।
ঘ. মন্তব্যটি সম্পূর্ণ সত্য। জলিল সাহেবের আচরণ ক্ষমতার দম্ভ এবং অন্যায়ের প্রতি পক্ষপাতের এক নগ্ন উদাহরণ। তিনি তার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিকে ব্যবহার করে ছেলের অন্যায়কে ঢাকার চেষ্টা করছেন এবং যিনি প্রতিবাদ করছেন, তাকেই হুমকি দিচ্ছেন। এই আচরণ হযরত মুহম্মদ (স.)-এর জীবনাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত। হযরত (স.) ছিলেন তৎকালীন আরবের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, কিন্তু তিনি কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। তিনি ন্যায়ের ক্ষেত্রে আপন-পর বিচার করতেন না। তার বিখ্যাত উক্তি ছিল, "আমার কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করত, আমি তারও হাত কেটে দিতাম।" তিনি নিজের পালক পুত্রের ক্ষেত্রেও আইন প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, আইনের চোখে সবাই সমান। জলিল সাহেবের আচরণ যেখানে ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ এবং ন্যায়ের পরিপন্থী, সেখানে মহানবী (স.)-এর জীবন ছিল ন্যায়, সাম্য এবং মানবতার এক মূর্ত প্রতীক।
প্রশ্ন ১১: পয়লা বৈশাখ (গদ্য)
উদ্দীপক: একটি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উপলক্ষে শহরে একটি বড় কনসার্টের আয়োজন করে। তরুণ-তরুণীরা সেখানে ভিড় জমায়। অন্যদিকে, স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে জারি-সারি, বাউল গান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করে, কিন্তু সেখানে দর্শকের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
প্রশ্ন: ক. ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানটি কী? খ. পয়লা বৈশাখকে কেন বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বলা হয়? গ. উদ্দীপকের কনসার্টের আয়োজনের সাথে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত কোন সংস্কৃতির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। ঘ. "উদ্দীপকের স্থানীয় সংগঠনটির উদ্যোগই ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূল চেতনাকে ধারণ করে"— বিশ্লেষণ করো।
নমুনা উত্তর: ক. ‘হালখাতা’ হলো পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের পুরানো হিসাবের খাতা বন্ধ করে নতুন খাতা খোলার একটি আনুষ্ঠানিকতা।
খ. পয়লা বৈশাখকে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বলা হয় কারণ এই উৎসবটি ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল বাঙালি একসাথে পালন করে। এটি কোনো বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি সমগ্র বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক উৎসব। এই দিনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এর আয়োজন ও উদযাপনে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নেই, আছে বাঙালিয়ানার এক純粹 প্রকাশ। তাই এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব ও সর্বজনীন উৎসব।
গ. উদ্দীপকের কনসার্টের আয়োজনের সাথে ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতির সাদৃশ্য রয়েছে। প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালির সংস্কৃতিকে দমিয়ে রাখার জন্য তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা রবীন্দ্রসংগীতের মতো বাঙালির প্রাণের সম্পদকে নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল। উদ্দীপকের ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উপলক্ষে কনসার্টের আয়োজনও একটি ভিনদেশি বা অপসংস্কৃতির চর্চা, যা বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর প্রভাব ফেলছে। এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আয়োজিত এবং এর সাথে বাঙালির শেকড়ের কোনো যোগ নেই। এই ধরনের সংস্কৃতি চর্চা প্রবন্ধে উল্লিখিত বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনেরই আধুনিক রূপ।
ঘ. মন্তব্যটি সম্পূর্ণ যথার্থ। ‘পয়লা বৈশাখ’ প্রবন্ধের মূল চেতনা হলো বাঙালির নিজস্ব অসাম্প্রদায়িক এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির উদযাপন। লেখক দেখিয়েছেন যে, পাকিস্তানি শাসনামলের শত বাধা সত্ত্বেও বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে এবং পয়লা বৈশাখ উদযাপনের মাধ্যমে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য ঘোষণা করেছে। উদ্দীপকের স্থানীয় সংগঠনটিও ঠিক সেই কাজটিই করেছে। তারা বিদেশি সংস্কৃতির চাকচিক্যের বিপরীতে নিজেদের লোকজ সংস্কৃতি— জারি-সারি, বাউল গান, ও গ্রামীণ মেলাকে তুলে ধরেছে। তাদের এই আয়োজনে কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই, আছে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ভালোবাসা এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। দর্শকের উপস্থিতি কম হলেও তাদের এই উদ্যোগই বাঙালির প্রকৃত সাংস্কৃতিক চেতনাকে ধারণ করে। এটিই সেই সাংস্কৃতিক সংগ্রাম, যা প্রবন্ধের মূল উপজীব্য। তাই বলা যায়, সংগঠনটির উদ্যোগই প্রবন্ধের মূল আদর্শকে সার্থকভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।
