শিক্ষা, অনুপ্রেরণা এবং ক্যারিয়ার গাইডলাইনের এক বিশ্বস্ত ঠিকানায় আপনার পদচারণাকে আমরা জানাই আন্তরিক অভিনন্দন Path Bari

SSC বিজ্ঞান সেরা সৃজনশীল প্রশ্ন (১১টি): সম্পূর্ণ উত্তরসহ প্রস্তুতি (SSC Science Creative Q&A) | Path Bari



 এসএসসি বিজ্ঞান সেরা (১১ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর)

ভূমিকা: সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং সে জ্ঞানকে ব্যবহার করে নতুন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করে। এখানে এসএসসি বিজ্ঞান সিলেবাসের উপর ভিত্তি করে ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার উত্তর দেওয়া হলো।


প্রশ্ন ১: নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

শফিক সাহেব একজন কৃষক। তিনি তার জমিতে ধান চাষ করেন। প্রতি বছর একই জমিতে একই ফসল চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং ফলন আশানুরূপ হচ্ছে না। শফিক সাহেবের প্রতিবেশী রফিক সাহেব তাকে বললেন, জমিতে পর্যায়ক্রমে ডাল জাতীয় ফসল চাষ করতে।

ক) সালোকসংশ্লেষণ কী? খ) রেচন প্রক্রিয়াকে কেন 'বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া' বলা হয়? ব্যাখ্যা করো। গ) শফিক সাহেবের সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা করো। ঘ) রফিক সাহেবের পরামর্শ শফিক সাহেবের জন্য কতটা উপকারী হবে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ১:

ক) সালোকসংশ্লেষণ: যে প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে, ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও পানির বিক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে এবং উপজাত হিসেবে অক্সিজেন নির্গত করে, তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।

খ) রেচন প্রক্রিয়াকে কেন 'বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া' বলা হয়: জীবের দৈহিক বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক বর্জ্য পদার্থ যে প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়, তাকে রেচন বলে। এই বর্জ্য পদার্থগুলোর মধ্যে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি প্রধান। এগুলো দেহে জমলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হতে পারে এবং এক পর্যায়ে তা জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাই রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যা সুস্থ জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। এ কারণেই রেচন প্রক্রিয়াকে 'বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া' বলা হয়।

গ) শফিক সাহেবের সমস্যার কারণ ব্যাখ্যা: শফিক সাহেব প্রতি বছর একই জমিতে একই ফসল, অর্থাৎ ধান চাষ করেন। ধান চাষের জন্য মাটি থেকে নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে শোষিত হয়। যখন একই ফসল বারবার চাষ করা হয়, তখন মাটির ঐ নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানগুলো ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার এটি একটি প্রধান কারণ। পুষ্টি উপাদানের অভাবে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কমে যায়। এছাড়া, একই ফসল চাষের ফলে নির্দিষ্ট রোগ-পোকার আক্রমণ বাড়তে পারে, যা ফলন হ্রাসে আরও অবদান রাখে।

ঘ) রফিক সাহেবের পরামর্শের উপযোগিতা বিশ্লেষণ: রফিক সাহেবের পরামর্শ শফিক সাহেবের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। এর কারণ হলো:

  • শস্য পর্যায়ক্রম (Crop Rotation): রফিক সাহেব শস্য পর্যায়ক্রমের কথা বলেছেন, যেখানে ধান (একবীজপত্রী শস্য) এর পর ডাল জাতীয় ফসল (দ্বিবীজপত্রী শস্য) চাষ করার কথা বলা হয়েছে।
  • নাইট্রোজেন সংবন্ধন: ডাল জাতীয় ফসল যেমন – মটর, শিম, ছোলা ইত্যাদির মূলে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসের নাইট্রোজেনকে মাটিতে সংবন্ধন (Nitrogen Fixation) করে নাইট্রেট লবণে পরিণত করে, যা উদ্ভিদের জন্য গ্রহণ উপযোগী। এভাবে ডাল জাতীয় ফসল মাটির নাইট্রোজেনের অভাব পূরণ করে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
  • বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ব্যবহার: বিভিন্ন ফসল মাটির বিভিন্ন গভীরতা থেকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। শস্য পর্যায়ক্রমের ফলে মাটির পুষ্টি উপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ: একই ফসল বারবার চাষ করলে নির্দিষ্ট রোগ-পোকার আক্রমণ বাড়ে। শস্য পর্যায়ক্রমের ফলে এই নির্দিষ্ট রোগ-পোকাগুলোর জীবনচক্র ব্যাহত হয়, ফলে তাদের আক্রমণ কমে।

সুতরাং, ডাল জাতীয় ফসল চাষ করে শফিক সাহেব তার জমির হারানো উর্বরতা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে ধানের ফলনও বাড়াতে পারবেন। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতি।


প্রশ্ন ২: নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও: (এখানে একটি সরল বর্তনীর চিত্র কল্পনা করো যেখানে একটি ব্যাটারি, একটি সুইচ এবং একটি বাল্ব সংযুক্ত আছে।)

ক) তড়িৎ প্রবাহ কী? খ) পরিবাহী ও অপরিবাহীর মধ্যে পার্থক্য লেখো। গ) উদ্দীপকের বর্তনীতে বাল্বটি জ্বলে ওঠার বৈজ্ঞানিক কারণ ব্যাখ্যা করো। ঘ) দৈনন্দিন জীবনে তড়িৎ শক্তি ব্যবহারের দুটি ইতিবাচক ও দুটি নেতিবাচক দিক বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ২:

ক) তড়িৎ প্রবাহ: কোনো পরিবাহীর যেকোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয়, তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। এর একক অ্যাম্পিয়ার (A)।

খ) পরিবাহী ও অপরিবাহীর মধ্যে পার্থক্য:

বৈশিষ্ট্যপরিবাহী (Conductor)অপরিবাহী (Insulator)
সংজ্ঞাযে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ সহজে চলাচল করতে পারে।যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ সহজে চলাচল করতে পারে না।
মুক্ত ইলেকট্রনপ্রচুর মুক্ত ইলেকট্রন থাকে।মুক্ত ইলেকট্রন প্রায় থাকে না।
উদাহরণতামা, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, গ্রাফাইট।কাঠ, রাবার, প্লাস্টিক, কাঁচ।
ব্যবহারতড়িৎ তার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির অংশ।তড়িৎ নিরোধক, সুইচবোর্ডের অংশ।

গ) উদ্দীপকের বর্তনীতে বাল্বটি জ্বলে ওঠার বৈজ্ঞানিক কারণ: উদ্দীপকের বর্তনীতে একটি ব্যাটারি, একটি সুইচ এবং একটি বাল্ব সংযুক্ত আছে। যখন সুইচটি বন্ধ করা হয় (অর্থাৎ অন করা হয়), তখন বর্তনীটি সম্পূর্ণ হয় এবং ব্যাটারি থেকে তড়িৎ প্রবাহ শুরু হয়। ব্যাটারি রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই তড়িৎ শক্তি বর্তনীর তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাল্বের ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে যায়। বাল্বের ফিলামেন্ট সাধারণত টাংস্টেন ধাতুর তৈরি, যার রোধ অনেক বেশি। তড়িৎ প্রবাহ যখন উচ্চ রোধের ফিলামেন্টের মধ্য দিয়ে যায়, তখন ফিলামেন্ট উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তাপশক্তি আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে বাল্বটি জ্বলে ওঠে। এটি মূলত জুলের তাপীয় ফল (Joule's Heating Effect) নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।

ঘ) দৈনন্দিন জীবনে তড়িৎ শক্তি ব্যবহারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক:

ইতিবাচক দিক:

  • আলো ও উষ্ণতা: তড়িৎ শক্তি আমাদের ঘর আলোকিত করে এবং শীতকালে হিটার ব্যবহার করে উষ্ণতা প্রদান করে। এটি আধুনিক জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
  • যন্ত্রপাতি ও যোগাযোগ: টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন সহ অসংখ্য আধুনিক যন্ত্রপাতি তড়িৎ শক্তির সাহায্যে চলে। যোগাযোগ ব্যবস্থার মেরুদণ্ডও এই তড়িৎ শক্তি। কল-কারখানা, পরিবহন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তড়িৎ শক্তির ব্যবহার অনস্বীকার্য।

নেতিবাচক দিক:

  • শকের ঝুঁকি: ভুলভাবে বা অসাবধানে তড়িৎ শক্তি ব্যবহার করলে বৈদ্যুতিক শক লাগতে পারে, যা মারাত্মক আঘাত বা এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। তারের ত্রুটি, খোলা তার বা ভেজা হাতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্পর্শ করলে এই ঝুঁকি বাড়ে।
  • পরিবেশগত প্রভাব: অধিকাংশ তড়িৎ শক্তি কয়লা, তেল বা গ্যাস পুড়িয়ে উৎপন্ন হয়, যা পরিবেশ দূষণ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের অন্যতম কারণ। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটে। এছাড়া, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটলে তেজস্ক্রিয়তার মারাত্মক বিপদ হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: রহিম সাহেব একজন ডায়াবেটিস রোগী। ডাক্তার তাকে নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ করতে বলেছেন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পরামর্শ দিয়েছেন।

ক) হরমোন কী? খ) টিকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। গ) রহিম সাহেবের রক্তে কোন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং এর কারণ কী? ব্যাখ্যা করো। ঘ) ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শগুলো রহিম সাহেবের সুস্থ জীবন ধারণে কতটা সহায়ক হবে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৩:

ক) হরমোন: হরমোন হলো এক প্রকার জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে দেহের নির্দিষ্ট লক্ষ্য কোষে পৌঁছে এবং দেহের শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।

খ) টিকার গুরুত্ব: টিকা হলো এমন একটি জৈব প্রস্তুতকৃত ঔষধ যা কোনো নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। টিকার গুরুত্ব অপরিসীম কারণ:

  • রোগ প্রতিরোধ: টিকা শরীরে নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে সেই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • মহামারী নিয়ন্ত্রণ: ব্যাপক হারে টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে পোলিও, হাম, যক্ষ্মা, টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, কোভিড-১৯ এর মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্মূলও হয়েছে।
  • জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন: টিকা জনসাধারণের স্বাস্থ্য উন্নত করে, মৃত্যুহার কমায় এবং সমাজে রোগের বিস্তার রোধ করে একটি সুস্থ ও উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী গঠনে সহায়তা করে।

গ) রহিম সাহেবের রক্তে কোন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং এর কারণ: রহিম সাহেব একজন ডায়াবেটিস রোগী। ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় রোগ যেখানে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ হলো, অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন হরমোনের অভাব অথবা ইনসুলিনের প্রতি দেহের কোষগুলোর সংবেদনশীলতা কমে যাওয়া। ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এটি গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং যকৃতে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা রাখতে সহায়তা করে। যখন ইনসুলিনের অভাব হয় বা এটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, যা বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে।

ঘ) ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শগুলোর সহায়ক ভূমিকা বিশ্লেষণ: ডাক্তার কর্তৃক রহিম সাহেবকে নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই পরামর্শগুলো তার সুস্থ জীবন ধারণে অত্যন্ত সহায়ক হবে:

  • নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ: ইনসুলিন একটি অত্যাবশ্যকীয় হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না বা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে কাজ করে না। বাইরের থেকে ইনসুলিন গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়, যা ডায়াবেটিসের জটিলতা যেমন - হৃদরোগ, কিডনি রোগ, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত শর্করা এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করে আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি এবং জটিল শর্করা (যেমন - লাল আটা, ঢেঁকিছাঁটা চাল) গ্রহণ করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে, ফলে ইনসুলিনের উপর চাপ কমে। পরিমিত ও সুষম খাদ্যাভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

এই দুটি পরামর্শ মেনে চললে রহিম সাহেব তার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, ডায়াবেটিসের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাগুলো এড়াতে পারবেন এবং একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।


প্রশ্ন ৪: পরিবেশ দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে এই সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। মানুষসহ সকল জীবের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

ক) গ্রিনহাউস প্রভাব কী? খ) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। গ) পরিবেশ দূষণের কারণগুলো আলোচনা করো। ঘ) পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক করণীয় বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৪:

ক) গ্রিনহাউস প্রভাব: গ্রিনহাউস প্রভাব হলো বায়ুমণ্ডলের কিছু নির্দিষ্ট গ্যাসের (যেমন - কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প) দ্বারা সূর্যের তাপ আটকে রাখার প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠকে উষ্ণ রাখে। এই গ্যাসগুলো সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দেয় কিন্তু পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

খ) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব: জীববৈচিত্র্য বলতে পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল প্রকার জীব (উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব) এবং তাদের আবাসস্থলের বৈচিত্র্যকে বোঝায়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম কারণ:

  • পরিবেশের ভারসাম্য: প্রতিটি জীবেরই খাদ্যশৃঙ্খল এবং বাস্তুতন্ত্রে একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। জীববৈচিত্র্য হ্রাস পেলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
  • অর্থনৈতিক মূল্য: জীববৈচিত্র্য খাদ্য, ঔষধ, বস্ত্র, জ্বালানি এবং শিল্প কারখানার কাঁচামালের উৎস। এটি পর্যটন শিল্পেরও ভিত্তি।
  • পরিবেশ সেবা: জীববৈচিত্র্য পরিবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা যেমন - পরাগায়ন, মাটি উর্বরকরণ, পানি বিশুদ্ধকরণ এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ভবিষ্যৎ প্রজন্ম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ পৃথিবী নিশ্চিত করতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।

গ) পরিবেশ দূষণের কারণগুলো: পরিবেশ দূষণ একটি জটিল সমস্যা এবং এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে:

  • শিল্প বর্জ্য: কল-কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য, বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মাটি, পানি ও বায়ুকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।
  • যানবাহনের ধোঁয়া: জীবাশ্ম জ্বালানি (পেট্রোল, ডিজেল) চালিত যানবাহনের ধোঁয়া থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
  • কৃষি বর্জ্য: অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ও পানির দূষণ ঘটে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে।
  • গৃহস্থালি বর্জ্য: অপরিকল্পিতভাবে পলিথিন, প্লাস্টিক, খাবারের উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলার ফলে মাটি ও পানি দূষিত হয় এবং ড্রেনেজ সিস্টেমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
  • শব্দ দূষণ: যানবাহনের উচ্চ শব্দ, কল-কারখানার শব্দ এবং মাইকের শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • বন উজাড়: বৃক্ষ নিধনের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ভূমিক্ষয় হয় এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।

ঘ) পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক করণীয় বিশ্লেষণ: পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উভয় স্তরেই সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন:

ব্যক্তিগত করণীয়:

  • পুনরায় ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার (Reduce, Reuse, Recycle): অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দেওয়া, পুরোনো জিনিসকে নতুন কাজে ব্যবহার করা এবং প্লাস্টিক, কাগজ, কাঁচের মতো জিনিস পুনর্ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
  • জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার: বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির অপচয় রোধ করা। হেঁটে বা সাইকেলে যাতায়াত করা, গণপরিবহন ব্যবহার করা।
  • বৃক্ষরোপণ: ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করা এবং গাছের যত্ন নেওয়া।
  • রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো: গৃহস্থালির কাজে পরিবেশবান্ধব পরিষ্কারক ব্যবহার করা এবং কীটনাশকের ব্যবহার কমানো।
  • সচেতনতা বৃদ্ধি: নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যদেরও পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা।

সামাজিক করণীয়:

  • আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ: সরকার কর্তৃক পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পরিকল্পিত বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক পদ্ধতি (যেমন - কম্পোস্টিং, রিসাইক্লিং) চালু করা।
  • শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ: শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য ও ধোঁয়া শোধনাগারের মাধ্যমে পরিশোধিত করে পরিবেশে ছাড়ার ব্যবস্থা করা।
  • গণসচেতনতা সৃষ্টি: গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের কুফল এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
  • নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ এর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা।
  • বন সংরক্ষণ: বন উজাড় রোধ এবং নতুন বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় স্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব এবং একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।


প্রশ্ন ৫: জ্যোতি একজন মেধাবী ছাত্রী। সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রায়শই মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখত। তার বাবা-মা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেন, তার চোখে সমস্যা হয়েছে এবং তাকে চশমা ব্যবহার করতে হবে।

ক) আলোর প্রতিসরণ কী? খ) বিবর্ধক কাঁচকে কেন সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়? ব্যাখ্যা করো। গ) জ্যোতির চোখে কী ধরনের ত্রুটি হয়েছে এবং এর কারণ কী? ব্যাখ্যা করো। ঘ) জ্যোতির এই সমস্যার সমাধানে চশমা কীভাবে কাজ করবে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৫:

ক) আলোর প্রতিসরণ: আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তির্যকভাবে প্রবেশ করলে এর গতিপথের দিক পরিবর্তন হয়। আলোর এই দিক পরিবর্তনের ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।

খ) বিবর্ধক কাঁচকে কেন সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়: বিবর্ধক কাঁচ হলো একটি উত্তল লেন্স, যা কোনো বস্তুকে তার ফোকাস দূরত্বের মধ্যে রেখে দেখলে বস্তুর একটি সোজা, অবাস্তব এবং বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব তৈরি করে। একটি সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও একটিমাত্র উত্তল লেন্স ব্যবহার করা হয় এবং এটিও বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব তৈরি করে ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখতে সহায়তা করে। যেহেতু বিবর্ধক কাঁচও একই কার্যনীতিতে কাজ করে এবং এর গঠন সরল, তাই এটিকে সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়।

গ) জ্যোতির চোখে কী ধরনের ত্রুটি হয়েছে এবং এর কারণ: জ্যোতির মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখার লক্ষণগুলো 'মায়োপিয়া' বা 'স্বল্পদৃষ্টি' ত্রুটির ইঙ্গিত দেয়। কারণ:

  • অক্ষিগোলকের আকার বড় হওয়া: মায়োপিয়ার প্রধান কারণ হলো অক্ষিগোলকের ব্যাস স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যাওয়া। এর ফলে দূরের বস্তু থেকে আসা সমান্তরাল আলোকরশ্মি রেটিনার সামনে মিলিত হয়, রেটিনার উপর নয়।
  • লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেশি হওয়া: চোখের লেন্সের বক্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে বা এর ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা বেড়ে যায়। এর ফলে লেন্স দূরের বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনার সামনে গঠন করে।

এ কারণে জ্যোতি দূরের জিনিস ঝাপসা দেখে কিন্তু কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পায়।

ঘ) জ্যোতির এই সমস্যার সমাধানে চশমা কীভাবে কাজ করবে? জ্যোতির মায়োপিয়া সমস্যার সমাধানে অবতল লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করতে হবে। কার্যপ্রণালী:

  • অপসারী ক্ষমতা: অবতল লেন্সের একটি অপসারী ক্ষমতা (diverging power) আছে, অর্থাৎ এটি এর উপর আপতিত সমান্তরাল আলোকরশ্মিকে ছড়িয়ে দেয়।
  • প্রতিবিম্ব গঠন: যখন জ্যোতি অবতল লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করে, তখন দূরের বস্তু থেকে আসা সমান্তরাল আলোকরশ্মি প্রথমে চশমার অবতল লেন্সে আপতিত হয়। অবতল লেন্স এই আলোকরশ্মিগুলোকে কিছুটা ছড়িয়ে দেয়।
  • রেটিনায় ফোকাস: এই অপসারিত আলোকরশ্মিগুলো পরবর্তীতে চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরিত হয়ে রেটিনার উপর সঠিকভাবে ফোকাস করে। এর ফলে জ্যোতি দূরের বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পায়।

সুতরাং, অবতল লেন্স চোখের লেন্সের অতিরিক্ত অভিসারী ক্ষমতাকে প্রশমিত করে বা অক্ষিগোলকের বর্ধিত দৈর্ঘ্যের সমস্যাকে সমাধান করে, যার ফলে প্রতিবিম্ব রেটিনার উপর পড়ে এবং ঝাপসা দেখা দূর হয়।


প্রশ্ন ৬: মানুষের জীবনে খাদ্য একটি মৌলিক চাহিদা। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল মেশানো বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা। ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ক) সুষম খাদ্য কাকে বলে? খ) খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের দুটি উপায় ব্যাখ্যা করো। গ) ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের কী কী ক্ষতি হতে পারে? আলোচনা করো। ঘ) খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য আমরা কীভাবে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৬:

ক) সুষম খাদ্য: যে খাদ্য দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান (যেমন – শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) সঠিক পরিমাণে ও নির্দিষ্ট অনুপাতে সরবরাহ করে, তাকে সুষম খাদ্য বলে।

খ) খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের দুটি উপায়:

  • আইনের সঠিক প্রয়োগ ও কঠোর শাস্তি: খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি গুরুতর অপরাধ। সরকার কর্তৃক কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং যারা ভেজাল মেশাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে ভেজালকারীরা নিরুৎসাহিত হবে।
  • নিয়মিত বাজার তদারকি ও পরীক্ষা: খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে বাজার তদারকি এবং খাদ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্য পরীক্ষাগারে নমুনার মান পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হবে যে সেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।

গ) ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের কী কী ক্ষতি হতে পারে? ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা: ভেজাল খাদ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং, রাসায়নিক পদার্থ এবং নিম্নমানের উপাদান পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে বমি, ডায়রিয়া, বদহজম এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • কিডনি ও লিভারের ক্ষতি: ভেজাল খাদ্যে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থগুলো কিডনি এবং লিভারের উপর সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদী ভেজাল খাদ্য গ্রহণে এই অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাতে পারে এবং বিকল হয়ে যেতে পারে।
  • ক্যান্সার: অনেক ভেজাল পদার্থ, বিশেষ করে কাপড়ের রং, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ইত্যাদি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী (কার্সিনোজেনিক) উপাদান ধারণ করে। দীর্ঘমেয়াদী ভেজাল খাদ্য গ্রহণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
  • স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি: কিছু ভেজাল পদার্থ স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং এমনকি স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  • অ্যালার্জি ও ত্বকের সমস্যা: ভেজাল খাদ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম উপাদান অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • পুষ্টিহীনতা: ভেজাল খাদ্য প্রায়শই পুষ্টিগুণহীন হয় বা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে না। এর ফলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, যা দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং বিভিন্ন পুষ্টিজনিত রোগের কারণ হতে পারে।
  • গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি: গর্ভবতী মায়েরা ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, যা জন্মগত ত্রুটি বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।

ঘ) খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি: খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। এটি বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে:

  • শিক্ষা ও প্রচারণা: পাঠ্যপুস্তকে খাদ্যে ভেজাল এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। গণমাধ্যম যেমন – টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, প্রতিবেদন ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।
  • কর্মশালা ও সেমিনার: বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের উপর কর্মশালা, সেমিনার এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে জনসাধারণ সরাসরি অংশগ্রহণ করে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।
  • সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার: ভেজাল খাদ্যের কুফল এবং ভেজালমুক্ত খাদ্য চেনার উপায় সম্পর্কে তথ্য সংবলিত লিফলেট, ব্যানার ও পোস্টার বিতরণ ও প্রদর্শন করা যেতে পারে।
  • ভোক্তা অধিকার সংগঠন শক্তিশালীকরণ: ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে তারা ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে এবং ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করতে পারে। ভোক্তাদের উচিত এই সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করে ভেজালের তথ্য জানানো।
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি: স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুষ্টিবিদদের মাধ্যমে সরাসরি মানুষকে খাদ্যে ভেজালের ঝুঁকি এবং নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে।
  • সুপারিশ ও পুরস্কার: যে সকল বিক্রেতা ভেজালমুক্ত পণ্য বিক্রি করেন, তাদের উৎসাহিত করতে হবে। একই সাথে, যারা ভেজাল সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রেতারা আরও সতর্ক হবে এবং ভেজালমুক্ত খাদ্য গ্রহণে আগ্রহী হবে, যা ভেজালকারীদের নিরুৎসাহিত করবে এবং নিরাপদ খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।


প্রশ্ন ৭: রিপা প্রতিদিন সকালে স্কুলের মাঠে জগিং করে। তার মতে, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম দেহকে সুস্থ ও সচল রাখে। অপরদিকে, তার বন্ধু নিপা মনে করে, শারীরিক ব্যায়ামের কোনো প্রয়োজন নেই, কেবল ভালো খাবার খেলেই সুস্থ থাকা যায়।

ক) শ্বসন কী? খ) রক্তে হিমোগ্লোবিনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো। গ) রিপার মতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের প্রভাব ব্যাখ্যা করো। ঘ) রিপা ও নিপার মধ্যে কার ধারণাটি অধিক বিজ্ঞানসম্মত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৭:

ক) শ্বসন: যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষে অক্সিজেন অথবা অক্সিজেন ছাড়াই জটিল খাদ্যবস্তু জারিত হয়ে সরল বস্তুতে পরিণত হয় এবং শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে শ্বসন বলে।

খ) রক্তে হিমোগ্লোবিনের গুরুত্ব: হিমোগ্লোবিন হলো রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত একটি লৌহঘটিত প্রোটিন রঞ্জক পদার্থ। এর প্রধান গুরুত্বগুলো হলো:

  • অক্সিজেন পরিবহন: হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে এবং তা দেহের সকল কোষে পরিবহন করে পৌঁছে দেয়। কোষীয় শ্বসনের জন্য অক্সিজেন অত্যাবশ্যক।
  • কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন: হিমোগ্লোবিন দেহের কোষ থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইডের একটি অংশকে কার্বামিনোহিমোগ্লোবিন হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন করে, যা পরে নিঃশ্বাসের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
  • রক্তের রং: হিমোগ্লোবিন থাকার কারণে রক্তের রং লাল হয়।

হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) দেখা দেয়, যা দেহের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।

গ) রিপার মতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের প্রভাব: রিপা মনে করে, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম দেহকে সুস্থ ও সচল রাখে। তার এই ধারণার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের প্রভাবগুলো নিম্নরূপ:

  • শারীরিক সুস্থতা: ব্যায়াম হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী করে, জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: ব্যায়াম অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্থূলতা-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • মানসিক সুস্থতা: ব্যায়াম মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে। এটি এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা মেজাজ উন্নত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা: নিয়মিত ব্যায়াম পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ঘ) রিপা ও নিপার মধ্যে কার ধারণাটি অধিক বিজ্ঞানসম্মত? রিপা ও নিপার মধ্যে রিপার ধারণাটি অধিক বিজ্ঞানসম্মত। নিপার ধারণার সীমাবদ্ধতা: নিপা মনে করে কেবল ভালো খাবার খেলেই সুস্থ থাকা যায়। এটি আংশিক সত্য। সুষম খাদ্য গ্রহণ সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে, কেবল খাদ্য গ্রহণ সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি সুষম খাদ্য গ্রহণ করে কিন্তু সারাদিন নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন করে, তাহলে তার স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রাজনিত রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পেশী দুর্বল হতে পারে, হাড় ক্ষয় হতে পারে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে।

রিপার ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি: রিপা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ:

  • সমন্বিত প্রভাব: খাদ্য আমাদের শক্তি ও পুষ্টি যোগায়, আর ব্যায়াম সেই শক্তিকে ব্যবহার করে শরীরকে শক্তিশালী ও কার্যকর রাখে। ব্যায়াম ছাড়া শুধু ভালো খাবার খেলে সেই খাবারের পূর্ণ সুফল পাওয়া যায় না।
  • শারীরিক তন্ত্রের কার্যকারিতা: ব্যায়াম হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পেশী এবং হাড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং তাদের সচল রাখে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগ থেকে রক্ষা করে। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

সুতরাং, সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন যাপনের জন্য সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম অপরিহার্য। এটি একটি সমন্বিত জীবন পদ্ধতি। তাই রিপার ধারণাটিই অধিক বিজ্ঞানসম্মত।


প্রশ্ন ৮: শোভা ম্যাডাম দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের ক্লাসে একটি বিক্রিয়া লিখলেন: তিনি বললেন, এই বিক্রিয়াটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক) দহন বিক্রিয়া কী? খ) জীব fuels (জীবাশ্ম জ্বালানি) কেন অনবায়নযোগ্য সম্পদ? ব্যাখ্যা করো। গ) উদ্দীপকের বিক্রিয়াটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত চুলার মধ্যে কীভাবে ঘটে? ব্যাখ্যা করো। ঘ) বিক্রিয়াটি মানবজীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৮:

ক) দহন বিক্রিয়া: যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পদার্থ অক্সিজেনের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে, তাকে দহন বিক্রিয়া বলে।

খ) জীবাশ্ম জ্বালানি কেন অনবায়নযোগ্য সম্পদ: জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন - কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস) হলো কোটি কোটি বছর ধরে মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ ভূগর্ভে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় পরিবর্তিত হয়ে গঠিত জ্বালানি। এদের অনবায়নযোগ্য সম্পদ বলা হয় কারণ:

  • গঠন প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময়: এদের গঠিত হতে লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগে, যা মানুষের জীবনকালের তুলনায় অত্যন্ত দীর্ঘ।
  • সীমাবদ্ধ মজুদ: পৃথিবীতে এদের মজুদ সীমিত এবং যে হারে আমরা এগুলো ব্যবহার করছি, সেই হারে নতুন করে গঠিত হচ্ছে না।
  • পুনরায় তৈরি করা অসম্ভব: একবার ব্যবহার করলে এগুলো নিঃশেষ হয়ে যায় এবং বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে এদের পুনরায় তৈরি করা অসম্ভব।

গ) উদ্দীপকের বিক্রিয়াটি একটি প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত চুলার মধ্যে কীভাবে ঘটে? উদ্দীপকের বিক্রিয়াটি হলো মিথেন (CH4) এর দহন বিক্রিয়া। প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন। একটি প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত চুলার মধ্যে এই বিক্রিয়াটি নিম্নোক্তভাবে ঘটে:

  • মিথেন সরবরাহ: চুলার সাথে সংযুক্ত পাইপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস (মিথেন) সরবরাহ করা হয়।
  • অক্সিজেনের মিশ্রণ: চুলার বার্নারে গ্যাস নির্গমনের সাথে সাথে বাতাস থেকে অক্সিজেন (O2) মিশে যায়।
  • দহন: চুলা জ্বালানোর সময় একটি স্পার্ক (ignition) তৈরি হয়, যা মিথেন ও অক্সিজেনের মধ্যে দহন বিক্রিয়া শুরু করে।
  • তাপ ও আলো উৎপন্ন: এই দহন বিক্রিয়ার ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপ শক্তি (যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়) এবং আলোক শক্তি উৎপন্ন হয়। একই সাথে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) এবং জলীয় বাষ্প (H2O) উপজাত হিসেবে তৈরি হয় এবং চিমনি বা ধোঁয়া নির্গমনের মাধ্যমে পরিবেশে নির্গত হয়।

এটি একটি সম্পূর্ণ দহন বিক্রিয়া, যেখানে মিথেন অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং পানি উৎপন্ন করে।

ঘ) বিক্রিয়াটি মানবজীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? উদ্দীপকের দহন বিক্রিয়াটি (মিথেন + অক্সিজেন → কার্বন ডাই-অক্সাইড + পানি + শক্তি) মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  • গৃহস্থালি কাজে জ্বালানি: প্রাকৃতিক গ্যাস (মিথেন) আমাদের দেশে রান্না ও উষ্ণতার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত জ্বালানি। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন তাপ শক্তি ব্যবহার করে আমরা খাবার রান্না করি, পানি গরম করি এবং ঘর উষ্ণ রাখি।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন: অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ শক্তি এই দহন বিক্রিয়া থেকেই আসে।
  • শিল্প কারখানায়: বিভিন্ন শিল্প কারখানায় তাপ উৎপাদন এবং কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয়, যা এই দহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব হয়। সিমেন্ট, সার, কাঁচ ইত্যাদি শিল্পে এর ব্যবহার ব্যাপক।
  • পরিবহন: সিএনজি (Compressed Natural Gas) হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস কিছু যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা পরিবেশবান্ধব এবং ব্যয়সাশ্রয়ী।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: প্রাকৃতিক গ্যাস দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে এবং শিল্প উন্নয়নে অপরিহার্য।

এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন শক্তি মানবজাতির দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, শিল্প এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপরিহার্য অবদান রাখে।


প্রশ্ন ৯: রক্ত মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহন করে এবং রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। রক্তে কোনো সমস্যা হলে মানবদেহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

ক) রক্তরস কী? খ) অনুচক্রিকার কাজ ব্যাখ্যা করো। গ) রক্ত কীভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়? আলোচনা করো। ঘ) রক্ত সঞ্চালনে সতর্কতা অবলম্বন করা কেন অত্যাবশ্যক? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ৯:

ক) রক্তরস: রক্তরস বা প্লাজমা হলো রক্তের তরল অংশ, যা রক্তের মোট আয়তনের প্রায় ৫৫%। এটি হালকা হলুদ বর্ণের, লবণাক্ত এবং সামান্য ক্ষারীয়। এতে প্রায় ৯১-৯২% পানি এবং ৮-৯% কঠিন পদার্থ (যেমন – আমিষ, গ্লুকোজ, খনিজ লবণ, হরমোন, অ্যান্টিবডি, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি) থাকে।

খ) অনুচক্রিকার কাজ: অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট হলো রক্তের ক্ষুদ্রতম কণা, যা রক্তের জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এর প্রধান কাজগুলো হলো:

  • রক্ত জমাট বাঁধা (Blood Clotting): দেহের কোনো স্থান কেটে গেলে অনুচক্রিকাগুলো সেখানে জমা হয়ে থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক এনজাইম নিঃসৃত করে। এই এনজাইম রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করে।
  • ক্ষত নিরাময়: রক্ত জমাট বাঁধার পাশাপাশি অনুচক্রিকা রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করতেও সাহায্য করে।

গ) রক্ত কীভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়? রক্ত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, প্রধানত শ্বেত রক্তকণিকার (White Blood Cells/Leukocytes) মাধ্যমে। এর পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ:

  • ফ্যাগোসাইটোসিস: রক্তের নিউট্রোফিল ও মনোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকাগুলো ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস) এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক কণাকে ভক্ষণ করে ধ্বংস করে। মনোসাইটগুলো টিস্যুতে প্রবেশ করে ম্যাক্রোফেজে পরিণত হয় এবং আরও কার্যকরভাবে জীবাণু ভক্ষণ করে।
  • অ্যান্টিবডি উৎপাদন: লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকাগুলো, বিশেষ করে B-লিম্ফোসাইট, যখন কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের (জীবাণু বা বহিরাগত প্রোটিন) সংস্পর্শে আসে, তখন তারা অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিগুলো নির্দিষ্ট জীবাণুকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। T-লিম্ফোসাইটগুলো সরাসরি আক্রান্ত কোষ বা জীবাণুকে আক্রমণ করে।
  • প্রদাহ প্রতিক্রিয়া: যখন কোনো স্থানে সংক্রমণ বা আঘাত হয়, তখন শ্বেত রক্তকণিকাগুলো সে স্থানে পৌঁছে প্রদাহ প্রতিক্রিয়া শুরু করে। এই প্রতিক্রিয়া সংক্রমণের বিস্তার রোধ করে এবং টিস্যু নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ স্মৃতির সৃষ্টি: একবার রোগ হলে B এবং T লিম্ফোসাইটগুলো সেই জীবাণুকে মনে রাখে এবং পরবর্তীতে সেই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে বা সরাসরি আক্রমণ করে রোগ প্রতিরোধ করে। এটি টিকার কার্যকারিতার ভিত্তি।

ঘ) রক্ত সঞ্চালনে সতর্কতা অবলম্বন করা কেন অত্যাবশ্যক? রক্ত সঞ্চালন (Blood Transfusion) একটি জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া, তবে এতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক। এর কারণগুলো হলো:

  • রক্তের গ্রুপের অসঙ্গতি: ABO এবং Rh রক্ত গ্রুপের অসঙ্গতি সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ভুল গ্রুপের রক্ত দিলে গ্রহীতার রক্তকণিকা দাতার রক্তকণিকার বিরুদ্ধে জমাট বেঁধে যায় (এগ্লুটিনেশন), যা রক্তনালী আটকে দিতে পারে, কিডনি অকার্যকর করতে পারে এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
  • রোগ সংক্রমণ: রক্তবাহিত রোগ যেমন - হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি/এইডস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি দাতার রক্ত থেকে গ্রহীতার শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে দাতার রক্ত স্ক্রিনিং করা অত্যাবশ্যক।
  • অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া: রক্ত সঞ্চালনের ফলে গ্রহীতার অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন – চুলকানি, ফুসকুড়ি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বা এমনকি অ্যানাফাইল্যাকটিক শক।
  • আয়রন ওভারলোড: যারা ঘন ঘন রক্ত গ্রহণ করে, তাদের শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হতে পারে, যা লিভার, হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
  • সংক্রমণ: রক্ত সংগ্রহ বা সঞ্চালনের সময় সঠিক জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করলে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হতে পারে।
  • প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ: রক্ত সঞ্চালনের সময় গ্রহীতার অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি, যাতে যেকোনো প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

এই সকল ঝুঁকির কারণে রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, রোগ স্ক্রিনিং এবং সংক্রমণমুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


প্রশ্ন ১০: রাসায়নিক সার ও কীটনাশক আধুনিক কৃষিতে ব্যাপক ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও এর কতিপয় পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত কুফল রয়েছে। অপরদিকে, জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহার পরিবেশের জন্য উপকারী।

ক) জৈব সার কী? খ) খাদ্য শৃঙ্খল বলতে কী বোঝো? ব্যাখ্যা করো। গ) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবেশগত কুফলগুলো আলোচনা করো। ঘ) আধুনিক কৃষিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার কীভাবে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ১০:

ক) জৈব সার: জৈব সার হলো উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ পচিয়ে তৈরি করা প্রাকৃতিক সার, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, গোবর সার, কম্পোস্ট সার, সবুজ সার ইত্যাদি।

খ) খাদ্য শৃঙ্খল: খাদ্য শৃঙ্খল হলো একটি বাস্তুতন্ত্রে শক্তি স্থানান্তরের একটি ক্রমিক প্রক্রিয়া, যেখানে একটি জীব অন্য একটি জীবকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং নিজেই আবার অন্য কোনো জীবের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে পুষ্টি ও শক্তি উৎপাদক থেকে বিভিন্ন স্তরের খাদক পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়। যেমন: ঘাস → ঘাসফড়িং → ব্যাঙ → সাপ → ঈগল। এখানে ঘাস উৎপাদক এবং ঈগল সর্বোচ্চ স্তরের খাদক।

গ) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবেশগত কুফল: রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ব্যাপক ফলন বৃদ্ধি হলেও এর মারাত্মক পরিবেশগত কুফল রয়েছে:

  • মাটির উর্বরতা হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদী রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উপকারী অণুজীবগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, মাটির গঠন নষ্ট হয় এবং মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা হ্রাস পায়। মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • পানি দূষণ: রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টি বা সেচের পানিতে মিশে ভূগর্ভস্থ পানি এবং নদী, পুকুর ও হ্রদের পানিকে দূষিত করে। এই দূষিত পানি পান করলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
  • ইউট্রোফিকেশন: রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও ফসফরাস পানিতে মিশে শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদের অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটায়, যাকে ইউট্রোফিকেশন বলে। এতে জলজ অক্সিজেন কমে যায় এবং মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়।
  • জীববৈচিত্র্য হ্রাস: কীটনাশক কেবল ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড়কেই নয়, বরং উপকারী পোকামাকড়, পাখি, মৌমাছি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীদেরও হত্যা করে, যা জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • বায়ু দূষণ: কিছু রাসায়নিক সার থেকে অ্যামোনিয়া বা নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাস নির্গত হয়, যা বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে এবং বায়ু দূষণ ঘটায়।
  • রাসায়নিক অবশেষ: কীটনাশকের অবশেষ ফলমূল ও শাকসবজিতে থেকে যায়, যা মানবদেহে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ঘ) আধুনিক কৃষিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার কীভাবে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে? আধুনিক কৃষিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে, কারণ এগুলো পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনে:

  • মাটির স্বাস্থ্য উন্নতকরণ: জৈব সার মাটির গঠন উন্নত করে, পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এটি মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা দীর্ঘকাল ধরে বজায় রাখে, যা রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা কমায়।
  • পানি দূষণ রোধ: জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ও পানির দূষণ হয় না। এগুলো পানিতে মিশে ভূগর্ভস্থ পানি বা নদ-নদী দূষিত করে না, ফলে ইউট্রোফিকেশনের মতো সমস্যাও হয় না।
  • জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: জৈব কীটনাশক সাধারণত নির্বাচিত পোকামাকড়কে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং পরিবেশের উপকারী জীবদের ক্ষতি করে না। এর ফলে পরাগায়নকারী পোকামাকড়, পাখি এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী সুরক্ষিত থাকে, যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করে।
  • মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষা: জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত খাদ্য রাসায়নিক অবশেষ মুক্ত হয়, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। এটি দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • পুনর্ব্যবহার ও বর্জ্য হ্রাস: জৈব সার তৈরিতে কৃষি বর্জ্য, পশুর বর্জ্য ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে এবং পরিবেশকে পরিষ্কার রাখে।
  • দীর্ঘমেয়াদী ফলন ও স্থায়িত্ব: জৈব কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বজায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী ফলন নিশ্চিত করা যায়। এটি মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করে তোলে।

সুতরাং, জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশ, মানবস্বাস্থ্য এবং কৃষি ব্যবস্থার স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য, যা সামগ্রিকভাবে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখে।


প্রশ্ন ১১: ইন্টারনেট বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি তথ্য সংগ্রহ, যোগাযোগ এবং বিনোদনের এক বিশাল ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তবে, ইন্টারনেটের অপব্যবহার বা অসতর্কতা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

ক) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) কী? খ) ই-লার্নিং এর সুবিধা ব্যাখ্যা করো। গ) ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনা করো। ঘ) ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর ১১:

ক) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT): তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology - ICT) বলতে তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, বিনিময় এবং বিতরণের জন্য ব্যবহৃত সকল প্রযুক্তিকে বোঝায়। এর মধ্যে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, সফটওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং ডিভাইস অন্তর্ভুক্ত।

খ) ই-লার্নিং এর সুবিধা: ই-লার্নিং বা ইলেকট্রনিক লার্নিং হলো ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ। এর প্রধান সুবিধাগুলো হলো:

  • যেকোনো স্থান থেকে শিক্ষা: শিক্ষার্থী বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে বা লেকচার দেখতে পারে, যা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা দূর করে।
  • সময় নমনীয়তা: ই-লার্নিং শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব গতিতে এবং সুবিধাজনক সময়ে শিখতে দেয়। চাকরিজীবী বা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ব্যক্তিরাও তাদের সময় অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • ব্যাপক রিসোর্স অ্যাক্সেস: ই-লার্নিং এর মাধ্যমে অনলাইন লাইব্রেরি, ভিডিও টিউটোরিয়াল, ই-বুক এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটের মতো বিশাল তথ্য ভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়।
  • ব্যয় সাশ্রয়: ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে ভ্রমণ খরচ, আবাসন খরচ এবং অনেক ক্ষেত্রে টিউশন ফি কম হতে পারে।
  • দক্ষতা উন্নয়ন: ই-লার্নিং শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং তাদের স্ব-শিক্ষায় উৎসাহিত করে।

গ) ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিকগুলো: ইন্টারনেট মানবজীবনে অসংখ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে:

  • তথ্য ও জ্ঞান: ইন্টারনেট তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। যেকোনো বিষয়ে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা গবেষণা, শিক্ষা এবং সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
  • যোগাযোগ: ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও কলিং এবং মেসেজিং অ্যাপসের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে দ্রুত ও সহজে যোগাযোগ করতে পারে। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগের পদ্ধতিকে সহজ করে দিয়েছে।
  • শিক্ষা: ই-লার্নিং, অনলাইন কোর্স, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বহুগুণ বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে পারে।
  • বিনোদন: ইন্টারনেট অডিও, ভিডিও, চলচ্চিত্র, গেমস এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কনটেন্টের এক বিশাল উৎস। মানুষ তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিনোদন উপভোগ করতে পারে।
  • অর্থনীতি ও ব্যবসা: ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। মানুষ ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে এবং আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
  • স্বাস্থ্যসেবা: অনলাইন কনসালটেশন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য হয়েছে।

ঘ) ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? ইন্টারনেটের ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি এর অপব্যবহার বা অসতর্কতা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলো এড়াতে নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

  • ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা: ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন – নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট) অনলাইনে শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অচেনা বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা: শক্তিশালী এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে এবং নিয়মিত পরিবর্তন করতে হবে। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা উচিত নয়। টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (Two-Factor Authentication) ব্যবহার করা নিরাপদ।
  • সাইবার বুলিং ও হয়রানি: সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে দ্রুত বাবা-মা, শিক্ষক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। অনলাইনে কারো সাথে আপত্তিকর বা বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ফিশিং ও ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষা: সন্দেহজনক ই-মেইল বা মেসেজের অ্যাটাচমেন্ট খোলা যাবে না বা লিংকে ক্লিক করা যাবে না। কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে নিয়মিত এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে এবং তা আপডেট রাখতে হবে।
  • অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ: ইন্টারনেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
  • অনলাইন গেমিং এর ঝুঁকি: অনলাইন গেমিং এর ক্ষেত্রে আসক্তি, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
  • আইন ও নীতি মেনে চলা: ইন্টারনেটে অবৈধ বা নৈতিকতাবিরোধী কোনো কাজ করা যাবে না। কপিরাইট আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
  • প্যারেন্টাল কন্ট্রোল: শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদের নজরদারি রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত।

Post a Comment

NextGen Digital Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...